মুক্তি পেলেন সেই মিনু

খুনের মামলার আসামি নন মিনু আক্তার। কুলসুমা আক্তার নামের এক নারী ওই মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তিনিই মিনুকে টাকা দেওয়ার কথা বলে কারাগারে পাঠান

কারামুক্তির পর আইনজীবী ও স্বজনদের সঙ্গে মিনু আক্তার।
ছবি: সংগৃহীত

খুনের মামলার আসামি না হয়েও প্রায় তিন বছর সাজা ভোগ করা মিনু আক্তার মুক্তি পেয়েছেন। আজ বুধবার বিকেলে তিনি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। এর আগে দুপুরে চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ শরীফুল আলম ভূঞা তাঁকে মুক্তির নির্দেশ দেন।

কারামুক্তির পর আবেগাপ্লুত মিনু বলেন, যাঁরা তাঁর মুক্তির জন্য কাজ করছেন, তাঁদের সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কারাধ্যক্ষ দেওয়ান মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের আদেশ পাওয়ার পর যাচাই-বাছাই করে মিনুকে মুক্তি দেওয়া হয়।

‘সাজা কুলসুমার, খাটছেন মিনু’ শিরোনামে গত ২৩ মার্চ প্রথম আলোয় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদন প্রকাশের দিনই চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ মামলাটি হাইকোর্টে বিচারাধীন থাকায় প্রতিবেদন পাঠান। সেখানে বলা হয়, প্রকৃত আসামির পরিবর্তে আরেকজন সাজা ভোগ করছেন।

আদালত সূত্র জানায়, সাজা ভোগ করা মিনু আক্তার নামের ওই নারীকে ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। এ ছাড়া প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তারের কারা রেজিস্ট্রারে থাকা ছবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম খান আদালতের সামনে তুলে ধরেন। দুজনের ছবির মধ্যে অমিল পাওয়া যায়।

চতুর্থ অতিরিক্ত চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের বেঞ্চ সহকারী ওমর ফুয়াদ প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট থেকে মিনুকে মুক্তির আদেশটি আজ বুধবার পাওয়ার পর কারাগারে পাঠানো হয়।

নিরপরাধ মিনুকে আইনি সহায়তা দেন চট্টগ্রামের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী গোলাম মাওলা মুরাদ। আজ বিকেলে চট্টগ্রাম কারা ফটকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিনুর জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া তিনটি বছর ফেরত পাওয়া যাবে না। জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা ও ক্ষতিপূরণের জন্য মামলা করা হবে।

মিনু যেভাবে কুলসুমা ‘বনে গেলেন’

আদালত সূত্র জানায়, মুঠোফোন নিয়ে কথা-কাটাকাটির জেরে ২০০৬ সালের ৯ জুলাই চট্টগ্রাম নগরের রহমতগঞ্জ এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পোশাককর্মী কোহিনুর বেগমকে হত্যা করা হয়। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর এই মামলার রায়ে কুলসুমাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ তত্ত্বাবধায়ক মো. শফিকুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃত আসামি কুলসুমা আক্তার মামলার সাজা হওয়ার আগে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। সাজা হওয়ার পর ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুমা সেজে মিনু আক্তার কারাগারে আসেন। কারা রেজিস্ট্রারে থাকা দুজনের ছবির মিল নেই। বিষয়টি জানার পর লিখিতভাবে আদালতকে জানানো হয়।

আরও পড়ুন

মিনু আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মর্জিনা আক্তার নামের পূর্বপরিচিত এক নারী তাঁকে টাকা দেওয়ার কথা বলে কারাগারে যেতে বলেন। তিনি কুলসুমাকে চেনেন না। ভয়ে এত দিন কাউকে কিছু বলেননি।

মিনু আক্তারের ভাই মো. রুবেল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোন মামলার আসামি নন। আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় বোনের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেননি। তাঁর বোনের জীবন থেকে তিনটি বছর হারিয়ে যাওয়ার ক্ষতিপূরণ চান তাঁরা।