‘মুনতাসীর মামুন বৃত্ত ভেঙে ইতিহাস ও মানুষের কাছে এসেছেন’

মুনতাসীর মামুন
সংগৃহীত

মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলা প্রবন্ধসাহিত্যে মুনতাসীর মামুন অন্যতম সক্রিয় একটি নাম। ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে তাঁর ক্ষুরধার রচনার তুলনা পাওয়া ভার। একই সঙ্গে তিনি বৃত্ত ভেঙে বের হয়ে এসেছেন ইতিহাস ও মানুষের কাছে। এভাবে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন ব্যক্তিমানুষ থেকে প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।

শনিবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘বাংলা ভাষায় ইতিহাসচর্চা: মুনতাসীর মামুনের বিচিত্র ভুবন’ শীর্ষক দিনব্যাপী সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে হেরিটেজ আর্কাইভস ও বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনী যৌথভাবে এই সেমিনারের আয়োজন করে।

উদ্বোধনী সেশনে বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খান বলেন, মুনতাসীর মামুন বৃত্ত ভেঙে বের হয়ে এসেছেন ইতিহাস ও মানুষের কাছে। মাঠে-ময়দানে গিয়ে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদের উত্তরসূরির কাজটি করছেন। এভাবে মুনতাসীর মামুন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছেন।

‘মুনতাসীর মামুনকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা সম্মানিত বোধ করছি। এই আয়োজন করতে পেরে আমরা আনন্দিত।’ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান।

নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, ‘আমার ছোট্ট জীবনে কী করতে পেরেছি, জানি না। তবে যা লিখেছি, ক্রোধ থেকে লিখেছি। আমাদের সময়টি ছিল ক্রোধ, দ্রোহ, যন্ত্রণা ও প্রেমের। এই কঠিন সময়ে ভালোবাসার বড্ড অভাব হয়। তবে আমি সবার অনেক ভালোবাসা পেয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সম্মাননার জন্য আমি কোনো কাজ করিনি। মরণোত্তর পুরস্কার তিরস্কারস্বরূপ। আমি অনেক ভাগ্যবান, কারণ, আমি জীবিত অবস্থায় এমন সম্মাননা পেয়েছি। জীবদ্দশায় আমাকে নিয়ে আয়োজন হয়, সেটা আমি দেখে যেতে পারছি। আমি কর্মেই মুক্তি খুঁজেছি, কর্মেই আনন্দ খুঁজেছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাজ্জাদ বকুলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে হেরিটেজ আর্কাইভসের প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মাহবুবর রহমান স্বাগত বক্তৃতা করেন। ইতিহাস সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক চৌধুরী শহীদ কাদের শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হেরিটেজ আর্কাইভসের পক্ষ থেকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়। এরপর তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে সাজ্জাদ বকুল তাঁর বক্তব্যে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনকে ‘চারণ ইতিহাসবিদ’ উপাধি দেওয়ার প্রস্তাব করেন।

দিনব্যাপী সেমিনারে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিসহ তিন শতাধিক ইতিহাস-গবেষক অংশ নেন। এতে পাঁচটি সেশনে ১২টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।