ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার করিমপুর থানার প্রত্যন্ত গ্রামটির নাম শিকারপুর। এই গ্রামের মাঠেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধারা প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, আশ্রয় নিয়েছিলেন সহস্রাধিক শরণার্থী। মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পর সেই মাঠটা সাজানো হয়েছিল বর্ণিল সাজে। উপলক্ষ মৈত্রী ফুটবল ম্যাচ। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের আমন্ত্রণে সেখানে গিয়েছিল বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এই ম্যাচ ঘিরে গতকাল শুক্রবার (২৬ মার্চ) দিনব্যাপী ছিল নানা আয়োজন। আনন্দ–উৎসবে ফুটবল খেলার মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন বিএসএফ ও বিজিবির সদস্যরা। দুই বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
শুক্রবার বেলা একটার দিকে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর সীমান্তের ১৪৭ নম্বর প্রধান পিলার দিয়ে বিজিবি কর্মকর্তা, খেলোয়াড় ও গণমাধ্যমকর্মীরা বিশেষ ব্যবস্থায় ভারতে প্রবেশ করেন। এরপর বিএসএফের কর্মকর্তা ও সদস্যরা তাঁদের অভিনন্দন জানিয়ে গাড়িতে করে শিকারপুর উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে নিয়ে যান। সেখানে বিজিবির কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিয়া সাদাত খান, ৪৭ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফরহাদ হারুন চৌধুরী, বিজিবি লজিস্টিক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল মালেককে ফুল ও উত্তরীয় পরিয়ে বরণ করে নেন বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের আইজি পিএস বেইন্স।
শান্তির প্রতীক কবুতর ও রঙিন বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করা হয়। খেলা শুরুর আগে স্থানীয় কয়েকটি স্কুলের শিক্ষার্থীরা গানের তালে মনোমুগ্ধকর নাচ পরিবেশ করে। সেখানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ভারতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ভাস্কর গাঙ্গুলী।
খেলা দেখতে আসা শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা সীমা আচার্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা হারু গোপাল ব্যানার্জি ভারতীয় সেনাসদস্য ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের সময় মিত্রবাহিনীর হয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন। তবে বাবার মুখে শোনা সেই যুদ্ধের গল্প আজও মেয়ে সীমা আচার্যের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী খেলার আয়োজন দেখে তিনি মুগ্ধ।
কলেজছাত্রী সুদর্শনা মণ্ডল ও মৌলি আচার্য বলে, বাংলাদেশের ভাষা ও নাটক তাদের খুবই ভালো লাগে। দুই দেশের বন্ধন যেন আরও সুদৃঢ় হয়, এটাই তাদের চাওয়া।
মৈত্রী ফুটবল ম্যাচে ভারতীয় বিএসএফ ৩–০ গোলে বিজিবিকে পরাজিত করে। তবে ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়ে বিজিবি দলের গোলরক্ষক মোহাম্মদ আকাশ আলী ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিত হন।
বিকেল পাঁচটায় পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ভারতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ভাস্কর গাঙ্গুলী বলেন, ‘এ ধরনের আয়োজনে ভ্রাতৃত্ব ও মূল্যবোধ আরও সুদৃঢ় হয়। বর্তমানে দুই দেশেই ফুটবলে ভাটা পড়েছে, সেটা কাটিয়ে ওটা উচিত। শিক্ষকদের বলব, পড়াশোনার পর শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠে পাঠান।’
বিএসএফের ইস্টার্ন কমান্ডের আইজি পিএস বেইন্স বলেন, বাংলাদেশের ৫০তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে। মাত্র ৫০ বছরে দেশটি একটি সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ উন্নয়নে আজ দক্ষিণ এশিয়ার রোল মডেল। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে, বিশেষ করে বিজিবি ও বিএসএফের সম্পর্কোন্নয়নে মৈত্রী ফুটবল ম্যাচের মতো খেলাধুলার আয়োজন করার ওপর জোর দেওয়া হবে।
বিজিবির কুষ্টিয়া সেক্টর কমান্ডার কর্নেল জিয়া সাদাত খান বলেন, ‘বঙ্গবুন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিএসএফের আমন্ত্রণে আসা হয়েছে। বন্ধুত্বের জায়গা থেকে দুই দেশের মধ্যে খেলা হয়েছে। চমৎকার আয়োজনে খুবই ভালো লেগেছে।’
সন্ধ্যার মধ্যেই সবাই সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।