‘মোগো এই ছয় মাস কষ্টের কোনো শ্যাষ নাই’

জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বাড়ি। সেই পানিতে হাড়ি–পাতিল ধুয়ে নিচ্ছেন এক গৃহিনী। সোমবার দুপুরে বরগুনা সদরের উপজেলায় পশ্চিম গোলবুনিয়া এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

‘পোলাপানগুলারে বাঁচাইতে পানিতে তলাইয়া থাকা চুলার পানি সরাইয়া আগুন দিয়া চুলা শুকাইতে হইবে। হেইরপর ভাত রান্না করমু। এই বেলায় তো কফালে আর ভাত জোডলে না, গতকাইলও (রোববার) জোডে নায়। মোগো এই ছয় মাস কষ্টের কোনো শ্যাষ নাই। এই খালে একটা স্লুইস কইরা দেলে পানিতে ডোবা লাগবে না মোগো।’

কথাগুলো বলছিলেন বরগুনা সদর উপজেলার বরইতলার বাঁধের পার্শ্ববর্তী চর এলাকার বাসিন্দা ফরিদা বেগম (৫০)। ওই চরে অর্ধশতাধিক পরিবারের বসবাস। বৈশাখ থেকে আশ্বিন পর্যন্ত ছয় মাস পূর্ণিমার প্রভাবে এ এলাকার নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তখন চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েন ওই চরের বাসিন্দারা।

দেলোয়ার নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ‘এমন জোয়ারে আমাগো দুর্ভোগের শেষ নাই। জোয়ারের পানিতে বাসাবাড়ির জিনিসপত্র ভাইসসা যায়। আইজ দুপুরে আর রান্দা অইবে না। জোয়ারের পানিতে বাড়ি তলাইয়া যাওয়ায় চুলায় পানি ঢোকছে। চুলা দিয়া পানি ফালাইয়া চাইরপাশে টিন দিয়া রান্দা লাগবে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে বিষখালী, বলেশ্বর নদীর মোহনায় পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আজ সোমবার বিষখালী নদীর বরগুনা সদর উপজেলার অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে। আর গত রোববার বিষখালী ও বলেশ্বর এই দুই নদ-নদীতে পানি বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পূর্ণিমার জোর প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারে বরইতলা এলাকার বাঁধের বাইরে চরে বসবাস করা অর্ধশতাধিক বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেকে ঘরে বসে হাঁড়ি-পাতিল ধুয়ে নিচ্ছেন। খাওয়ার পানির সংকট থাকায় পরিবারের ছেলেমেয়েরা আধা কিলোমিটার দূর থেকে পাত্র ভরে পানি আনছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, পূর্ণিমার প্রভাবে অস্বাভাবিক জোয়ারের নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ কারণে নদীর চর এলাকার অনেক বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।

জানতে চাইলে বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পাউবোর বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলব। স্লুইসগেট করে পানি প্রবেশ ঠেকানো গেলে ওই স্থান পরিদর্শন করে স্লুইসগেট নির্মাণে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলব।’