ময়মনসিংহে লোডশেডিংয়ে ভোগান্তি চরমে

শহর কিংবা গ্রাম—সর্বত্রই বিদ্যুৎ আসা–যাওয়া নৈমিত্তিক ঘটনা। এই গরমে একটু পরপর লোডশেডিং দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এক মাস ধরে ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলার ১৪৩টি ইউনিয়ন ও মহানগরের ৩৩টি ওয়ার্ডজুড়ে কমবেশি এমন দুর্ভোগ চলছে।

লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও নাগরিকেরা জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দিয়েছেন। বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহসংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের সঙ্গেও মতবিনিময় করা হয়েছে। সমস্যা সমাধানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ ব্যক্তিগতভাবে বিদ্যুৎ বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু এরপরও সমস্যার সমাধান হয়নি।

বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। এসব সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ–বিভ্রাট থেকে কবে মুক্তি মিলবে, সেই প্রশ্ন জনমনে। এভাবে চলতে থাকলে বিসিক শিল্পনগরীসহ অন্যান্য শিল্পপ্রতিষ্ঠানে পণ্য উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া কৃষি ও মৎস্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই দ্রুত এই সমস্যা নিরসনের দাবি ভুক্তভোগীদের।

বিসিক শিল্পনগরীর উদ্যোক্তা আবুল হাসিম জানান, দিনে একাধিকবার বিদ্যুৎ আসা-যাওয়া করায় এখানে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং প্রতিটি কারখানায় উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহসভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, বিদ্যুৎ বারবার আসা-যাওয়া করায় শিল্পোদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বিপণিবিতান ও হাটবাজারের দোকানগুলোতেও বেচাকেনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। জেনারেটর কিংবা আইপিএসের মাধ্যমে বিকল্প ব্যবস্থায় তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই দ্রুত এই সমস্যা নিরসনের দাবি জানান তিনি।
জনউদ্যোগ ময়মনসিংহ শাখার আহ্বায়ক নজরুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের সমস্যা সরকারের ইতিবাচক উন্নয়নের ধারাকে বাধাগ্রস্ত করছে। সেই সঙ্গে নাগরিক জীবনে ভোগান্তি সৃষ্টি করছে। সামনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে। তখন এই সমস্যা আরও প্রকট হবে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে বেশ কিছু সমস্যার কথা জানানো হয়। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ময়মনসিংহ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার তুলনায় ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি। সঞ্চালন লাইনে সক্ষমতার ঘাটতি। শম্ভুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনে গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় পূর্ণ সক্ষমতায় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত। এসব কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমে গেছে।

এ ছাড়া ভাবখালী সৌর বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট থেকে শুধু দিনে বিদ্যুৎ সরবরাহ, অপরিকল্পিত ও বিধিবহির্ভূত ভবন ও সড়ক নির্মাণে খুঁটি স্থাপনের কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতাসম্পন্ন সঞ্চালন লাইন নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি অপচয় রোধে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী ও মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

ময়মনসিংহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-৩–এর মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শামীম আলম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তাঁরা বারবার আলোচনা করছেন। দ্রুত লোডশেডিং পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তিনি আশাবাদী।

জেলা প্রশাসক এনামুল হক বলেন, শম্ভুগঞ্জে নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের স্থান বরাদ্দে জটিলতা ছিল। সে জটিলতা দূর করে এই সপ্তাহেই বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে ভূমি হস্তান্তর করা হবে। এর ফলে এখানে ৪০০ মেগাওয়াটের নতুন একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এক বছরের মধ্যেই লোডশেডিং শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া শম্ভুগঞ্জ বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধির জন্য মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হবে। ১৫ দিন পরপর বিদ্যুতের ঘাটতি পূরণে অগ্রগতি বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য মতবিনিময় সভা করা হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, বিদ্যুৎ–সংক্রান্ত যেকোনো তথ্য গ্রাহকদের জানাতে শিগগিরই বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে ফেসবুকে একটি পেজ খোলা হবে। কোনো এলাকায় লোডশেডিং হলে আগে থেকে মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হবে।