‘যদি কোনো দিন বিছনাত পইড়্যা যাই, তহন কী অবই!’

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের শারীরিক প্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমান
ছবি: প্রথম আলো

প্রতিদিন কাকাডাকা ভোরে উঠতে হয়। এরপর তড়িঘড়ি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে হয় চার কিলোমিটার দূরের ময়মনসিংহের গৌরীপুর জংশনে। সেখান থেকে শুরু হয় ট্রেনে চড়ে ভিক্ষাবৃত্তির কাজ। বাড়ি ফিরতে ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। ৩৪ বছর ধরে এমন ছকে বাঁধা জীবনযাপনে অভ্যস্ত শারীরিক প্রতিবন্ধী হাবিবুর রহমান।

দিন শেষে ভিক্ষা থেকে যা উপার্জন হয়, তা দিয়ে কোনোরকমে চলে হাবিবুরের সংসার। কোনো সঞ্চয় নেই। তাই ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকেন তিনি। বয়স বাড়তে থাকায় শরীর আগের মতো সায় দেয় না। বয়সের ভারে যদি কোনো দিন বিছানায় পড়ে যান, তখন স্ত্রী আর মেয়েকে কে দেখবে—এমন দুশ্চিন্তা পিছু ছাড়ে না তাঁর।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার বোকাইনগর ইউনিয়নের বাঘবেড় গ্রামে। শারীরিকভাবে তিনি প্রতিবন্ধী। তাঁর উচ্চতা ৩ ফুট (৩৬ ইঞ্চি)। ওজন ২৫ কেজি। তাঁর বর্তমান বয়স আনুমানিক ৫৫ বছর। তিনি স্বাভাবিকভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতে হয়।

হাবিবুর বলেন, তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে ছোটবেলা থেকে স্বাভাবিকভাবে কোনো কাজ করতে পারেন না। চলাফেরা করেন লাঠিতে ভর দিয়ে। তাঁর পড়াশোনা করা হয়নি। তিন ভাই আর এক বোনের সংসারে বোঝা হতে চাননি বলে ছোটবেলা থেকে ভিক্ষা করেন। গৌরীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে মোহনগঞ্জ, জারিয়া ও ভৈরবের ট্রেন চলে। ওইসব ট্রেনে ভিক্ষা করেন ৩৪ বছর ধরে। গৌরীপুর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে বিভিন্ন ট্রেনে ভিক্ষা করায় ট্রেনের নিয়মিত অনেক যাত্রী হাবিবুরকে চেনেন।

সম্প্রতি গৌরীপুর স্টেশনে কথা হয় হাবিবুরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে দিনে ২০০–৩০০ টাকা রোজগার হয়। এ দিয়ে কোনোরকমে সংসার চালান হাবিবুর। নিজের বসতভিটা ছাড়া তেমন কিছু নেই। সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও তা খুব সামান্য। সংসারে স্ত্রী ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক মেয়ে আছে। মেয়েটা শারীরিকভাবে সুস্থ নয় বলে তিনি জানান। হাবিবুর বলেন, ‘অহনও শরীর চলে বইল্যা কোনোরকমে চলতে পারতাছি। যদি কোনো দিন বিছনাত পইড়্যা যাই, তহন কী অবই!’

হাবিবুর রহমানের স্ত্রীর নাম আমেলা খাতুন। তিনি বলেন, স্বামী ভিক্ষা করে খুব সামান্য রোজগার করেন। এর মধ্যে বাড়ি থেকে গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনে যাওয়া–আসায় প্রায় ১০০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাকি টাকায় কোনোমতে সংসার চলে।