যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার কামালপুর ইউনিয়নের রোহদহ এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ হুমকির মুখে পড়েছে। মাটির তৈরি প্রায় এক কিলোমিটার রিংবাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কায় নির্ঘুম রাত কাটছে পাঁচ গ্রামের মানুষ। এ ছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রায় ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ বিকল্প বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধেও পানি চুইয়ে পড়ছে। মাটি ও বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ দুটি রক্ষার চেষ্টা করছে পাউবো।
সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি শুক্রবার বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, যমুনায় আর ১০ সেন্টিমিটার পানি বাড়লেই রৌহদহ থেকে ফকিরপাড়া টিটুর মোড় পর্যন্ত প্রায় ৮০০ মিটার দীর্ঘ মাটির বাঁধটি ভেসে যেতে পারে। বাঁধটি রৌহদহ, ফকিরপাড়া, কামালপুর, গোদাখালি ও ইছামারা গ্রামকে যমুনার ঢল থেকে রক্ষায় ঢাল হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।
রৌহদহ গ্রামের বাসিন্দা এবং কামালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যমুনার ঢল থেকে চার গ্রামের বসতবাড়ি, ফসল ও সম্পদ রক্ষায় এলাকাবাসী একজোট হয়ে নিজ উদ্যোগে গত শুস্ক মৌসুমে যমুনা নদীর পশ্চিম তীর ঘেঁষে মাটি কেটে ক্রস রিংবাঁধ নির্মাণ করেন। মাস দেড়েক আগে বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়। কিন্তু যমুনায় অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় দুদিন আগে এই বাঁধ উপচে পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। পরে পাউবো মাটিভর্তি সিনথেটিক ব্যাগ ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে। যমুনায় আর একটু পানি বৃদ্ধি পেলেই বাঁধ ধসে যেতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আহসান হাবিব বলেন, মাটির এই বাঁধ রক্ষায় মাটিভর্তি সিনথেটিক ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে।
এদিকে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পাউবোর ৮ কিলোমিটার বিকল্প বাঁধেও পানি চুইয়ে বের হওয়ায় আতঙ্কিত যমুনা পারের মানুষ। অনেক স্থানে বাঁধের মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বাঁধের নিচ দিয়ে পানি চুইয়ে পড়ার কারণে বাঁধ ধসে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভাঙনকবলিত পয়েন্টে পাউবোর কোনো বাঁধ টেকসই হচ্ছে না। এতে নদীতীরবর্তী এলাকার মানুষকে বর্ষা এলেই যমুনার ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটাতে হচ্ছে।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সারিয়াকান্দির কয়েকটি ইউনিয়নকে রক্ষা করতে ২০১৬ সালে কামালপুর ইউনিয়নের রৌহদহ থেকে কুতুবপুর ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রায় ৮ কিলোমিটার নদীশাসন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১৬ সালে এই বাঁধ নির্মাণকাজে ৩০৬ কোটি টাকা ব্যয় করে। বাঁধ নির্মাণের পরপরই এর ওপর বসতঘর নির্মাণ করায় ইঁদুরের নানা স্থানে গর্ত তৈরি হয়ে বাঁধের নিচ দিয়ে ফুটো হয়ে পানি ঢুকে এক পাশ থেকে অন্য পাশে বের হচ্ছে। তাতে বাঁধ ধসে যাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রৌহদহ বাজারের কাছে কয়েক বছর আগে বাঁধ ভেঙে যায়। তখন দুই কোটি টাকা ব্যয়ে জরুরিভাবে ২ হাজার ৩৭০ মিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয় শুধু বালু দিয়ে। তারও আগে সারিয়াকান্দির দড়িপাড়ায় ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দুই কিলোমিটার বিকল্প বাঁধ নির্মাণ করা হয়।