যমুনায় বাড়ছে পানি, ভাঙন আতঙ্কে চরের মানুষ

এবার বর্ষার আগেই লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসছে যমুনা নদীর ভাঙন। বর্ষার সময় কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন চরবাসী।

যমুনার পানি বাড়ায় ভাঙছে নদীতীরবর্তী এলাকা। বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিরামের পাঁচগাছি চরে গত বুধবারপ্রথম আলো

যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভাঙন শুরু হওয়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের দলিকার ও হাটবাড়ি চরের ৬০০ বাস্তুহারা পরিবার এখন দিশাহারা। একসময় চরের সচ্ছল কৃষক হয়েও নদীভাঙনে এখন তারা সহায়-সম্বলহীন। বর্ষা শুরু হতে না হতেই যমুনার ভাঙন লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসায় আশ্রয় হারানোর শঙ্কায় দিন কাটছে হাজারো মানুষের।

চালুয়াবাড়ি ইউনিয়নের যমুনা নদীর তীরবর্তী দুর্গম দলিকার চরে বসতভিটাসহ ২৪ বিঘা ফসলি জমি ছিল আলেক শেখের (৬০)। গত বছর দলিকার চর বিলীন হওয়ার পর জমিজমা ও বসতভিটা নদীতে হারিয়ে আলেক শেখ পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন নদীর ওপারে জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কালিরচর–সংলগ্ন বালুচরে। কিন্তু গত কয়েক দিনে পানি বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ ফুঁসে উঠেছে যমুনা নদী। ভাঙছে বিস্তীর্ণ এলাকা। ফলে আবারও ভাঙনের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন আলেক। এবার বর্ষার আগেই লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসছে যমুনা নদীর ভাঙন। বর্ষার সময় কী হবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তিনি।

আলেক শেখ বলেন, ‘এ পর্যন্ত ১৯ বার বসতবাড়ি ভাঙছে। লদীগর্ভে বিলীন হচে ২২ বিঘা ফসলি জমি। ২০১৮ সাল থ্যাকে ২০২১, চার বছরে বসতঘর গেচে যমুনার প্যাটত চারবার। এক বর্ষাত বসতঘর হারিয়ে হাটবাড়ি চরত গেচি, আরেক বর্ষাত সব হারিয়ে নিঃস্ব হাতে দলিকার চরত আসিচি। সর্বশেষ গতবার দলিকার চরের গোটা জনপদ যমুনা গিলে খাচে। কুলকিনারা না পায়া বউছল লিয়ে উঠচি ইসলামপুরের কালিরচরের সীমানাত। এখন এটিও লদি ধেয়ে আসিচ্চে। যমুনার তাড়া খ্যায়া এখন কোন্টে মাথা গোঁজমো ঠিকানা খুঁজে পাচ্চি না।’

স্থানীয় লোকজন বলেন, ২০১৯ ও ২০২০ সালের বর্ষায় যমুনার ভাঙনে বিলীন হয় হাটবাড়ি, দলিকা, উত্তর শিমুলতাইড়, বহলাডাঙা, সুজনের পাড়া, কাকলিহাতা, চকরতিনাথ, ফাজিলপুর, শিমুলবাড়ি, কাশিরচর, চকরথিনাথ, নোয়ারপাড়া ও দীঘাপাড়া চরের অনেক জমি। এবারও ওই চরগুলো হুমকিতে রয়েছে।

গত বুধবার সরেজমিন কালীতলা খেয়াঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় চড়ে দলিকার, হাটবাড়ি, মানিকদাইড়, ভাঙ্গুরগাছা, শিমুলতাইড়সহ কয়েকটি চর ঘুরে দেখা গেছে, বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। এতে তীরের মাটি ও বালুর স্তূপ ধসে পড়ছে নদীতে। বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী ফসলি জমি ও লোকালয়। ভাঙন বেশি হচ্ছে হাটবাড়ি ও দলিকার চরে।

দলিকার চরের কৃষক আমির আলী শেখ (৭০) বলেন, তাঁর ৩২ বিঘা জমি ছিল। যমুনার ভাঙনে সব শেষ। দুই বছর আগে দলিকার চরে এসে ঘর বানান। এখন ভাঙন সেই ঘরের দিকে এগোচ্ছে। এ নিয়ে ২২ বার তাঁর ঘর ভেঙেছে।

স্থানীয় ব্যক্তিরা বলেন, নদীভাঙনে দলিকার চরের আশ্রয়হারা প্রায় ২০০ পরিবার ঠাঁই নেয় পার্শ্ববর্তী জামালপুর জেলার ইসলামপুর উপজেলার কালিরচর–সংলগ্ন বালুচরে। আর হাটবাড়ি চরের প্রায় ৪০০ পরিবার বসতভিটা হারিয়ে ঠাঁই নেয় কিছুটা অদূরে বালুচরে। এখন যমুনার ভাঙনে এই দুই চরের ৬০০ পরিবার দিশাহারা।

চালুয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে চরাঞ্চলে যমুনার প্রবল ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে দলিকার ও হাটবাড়ি চরের ৬০০ পরিবার দিশাহারা হয়ে পড়েছে। ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে সুজায়েতপুর, করমজাপাড়া, নয়াপাড়া ও দীঘিপাড়া চরেও। নদীভাঙন ঠেকাতে নদী ছাড়াও চরাঞ্চলে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ দরকার।