যশোর ও নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় বিধিনিষেধ

যশোরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও বাস টার্মিনাল এলাকায় মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি । মঙ্গলবার যশোরের কেন্দ্রীয় বাসটার্মিনালে
ছবি: এহসান-উদ-দৌলা

যশোরে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে। সংক্রমণের এই হার গত কয়েক মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় যশোর ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌরসভার সব ওয়ার্ডে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান সভায় সভাপতিত্ব করেন।

সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রতিদিন যশোর পৌর ও অভয়নগরের নওয়াপাড়া পৌর এলাকায় সংক্রমণের হার বেড়ে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যশোর পৌর এলাকার দুটি ওয়ার্ডের চলমান বিধিনিষেধ সব ওয়ার্ডে ও নওয়াপাড়া পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডের চলমান বিধিনিষেধ সব ওয়ার্ডে সম্প্রসারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, ‘করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যশোর ও নওয়াপাড়া পৌরসভার সব কটি ওয়ার্ডে বিধিনিধেষ আরোপ করে শিগগিরই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে৷ এ ছাড়া মাস্ক ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও বাজারে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের ওপর আরও জোর দেওয়া হবে। গণসমাবেশ ও অনুষ্ঠান কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে একজন, রিকশায় একজন এবং অটোরিকশায় দুজনের বেশি চলাচল করতে পারবে না বলেও সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

যশোরে করোনা শনাক্তের হার ৪০ শতাংশ

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারের ল্যাবে নুমনা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যশোর জেলায় ২১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। যেখানে সংক্রমণের হার দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ। গত এপ্রিল মাসের পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণের হার।
যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে যশোরে ২৫ শতাংশ, মে মাসে ১৮ শতাংশ ও চলতি জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের সাত দিনে ২৮ শতাংশের নিচে ছিল সংক্রমণের হার। কিন্তু আজ অষ্টম দিনে সেই সংক্রমণের হার একলাফে ৪০ শতাংশ ছুঁয়েছে।  

যশোর জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ১০ থেকে ১২ জন করে রোগী ভর্তি হচ্ছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জন করোনা রোগী ভর্তি হয়েছেন। সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরে গেছেন ৯ জন। ৮০ শয্যার এই করোনা ইউনিটে ৫৭ জন ভর্তি রয়েছেন। আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি থাকা ৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে একজন মারা গেছেন।

৮০ শয্যার এই করোনা ইউনিটে ৫৭ জন ভর্তি রয়েছেন। আইসিইউ ইউনিটে ভর্তি থাকা ৩ জন করোনা রোগীর মধ্যে একজন মারা গেছেন।

তিন শয্যার আইসিইউ ইউনিট ব্যবস্থাপনার জন্য কোনো লোকবল নেই। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো হলেও এখনো চালু হয়নি। সিলিন্ডার অক্সিজেন দিয়ে চালানো হচ্ছে। সেই অক্সিজেনেরও অভাব রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা আরিফ আহমেদ বলেন, ‘যশোর জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটে সপ্তাহখানেক আগে দিনে দু–একজন ভর্তি হতেন। কিন্তু এখন সেখানে ১০ থেকে ১২ জন করে ভর্তি হচ্ছেন। আবার সুস্থ হয়ে বাড়িতেও অনেকে ফিরে যাচ্ছেন। সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্ল্যান্ট বসানো হলেও পাইপলাইনে অক্সিজেন সরবরাহ শুরু হয়নি। যে কারণে আইসিইউ ইউনিটে অক্সিজেনের স্বল্পতা রয়েছে। তবে ৬ হাজার ৭০০ লিটার ওজনের ১২টি অক্সিজেন সিলিন্ডার কেনার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’

হাসপাতালটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল করা হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই হাসপাতালে আজ সাধারণ রোগী আছেন ৪২৯ জন। প্রতিদিনই ৪৫০ জনের মতো সাধারণ রোগী থাকেন। করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল ঘোষণা করলে সাধারণ রোগীরা কোথায় চিকিৎসা নেবেন। তা ছাড়া এখনো সেই সময় আসেনি।

করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের কোনো সংকট নেই দাবি করে আরিফ আহমেদ বলেন, করোনা ইউনিটে চিকিৎসক, অক্সিজেন বা ওষুধপত্র যথেষ্ট থাকলেও সবচেয়ে বড় সমস্যা এখন আইসিইউ ব্যবস্থাপনা নিয়ে। আইসিইউ ইউনিটে কোনো লোকবল দেওয়া হয়নি। যে কারণে এই ইউনিটটি চালিয়ে নিতে হিমশিম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। ৬ জন চিকিৎসক, ১০ জন নার্সসহ মোট ৩২ জন লোকবল লাগবে। বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

নমুনা পরীক্ষায় টাকা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নমুনা পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়। এর পরও কারও আর্থিক সংকট থাকলে বিনা মূল্যে পরীক্ষা করে দেওয়া হয়।’