যাত্রীর চাপে ফেরিতে যানবাহন ওঠানোর জায়গা নেই

মাদারীপুরের বাংলাবাজার থেকে ছেড়ে আসা ফেরিতে ছিল প্রচণ্ড রকম যাত্রীর চাপ। আজ শুক্রবার বিকেলে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটেছবি: প্রথম আলো

গ্রামে ঈদ শেষে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ কর্মস্থলে যোগ দিতে এখনো ঢাকায় ফিরছেন। আজ শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথের উভয় দিকে যাত্রী ও যানবাহনের প্রচণ্ড চাপ দেখা গেছে। যাত্রীদের ভিড়ে বাংলাবাজার থেকে ফেরিতে যানবাহন ওঠানোর সুযোগ পাচ্ছে না।

আজ দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ লক্ষ করা যায়। তাঁদের মধ্যে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। বাংলাবাজার থেকে যেসব ফেরি শিমুলিয়া ঘাটে আসছিল, প্রতিটি ফেরিতেই ছিল অতিরিক্ত যাত্রী। পা রাখার জায়গা পর্যন্ত ছিল না ফেরিতে। ফেরি থেকে নেমেই যাত্রীরা বিভিন্ন ছোট গাড়িতে চড়ে রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। তবে গণপরিবহন না থাকায় পথে পথে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয় এই যাত্রীদের।

যাওয়ার সময় যেমন কষ্ট করে ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে করে গিয়েছিলেন, আসার সময় সেই রকম কষ্ট করেই ফিরতে হচ্ছে। ফেরিতে গাদাগাদির অবস্থা বলা দায়।

শিমুলিয়া ঘাট ও স্থানীয় লোকজন জানান, করোনা মহামারির কারণে চলাচলে বিধিনিষেধ থাকায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌপথে লঞ্চ, স্পিডবোট ও ট্রলার চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের ফেরিতে পারাপার করা হচ্ছে। ঈদের পরদিন থেকে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেন মানুষ। তবে যাঁরা ঈদে বাড়ি যেতে পারেননি, তাঁরাও দলে দলে ঢাকা ছাড়েন। আজ ছুটির দিন ছিল, তাই ঢাকা থেকে প্রচুর মানুষ গ্রামে যান। আবার ঈদের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে ঢাকার দিকে রওনা করছেন যাত্রীরা। ফলে ঘাটের দুই দিকেই যাওয়া–আসার চাপ অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। ফেরিতে মানুষের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা কম। যাত্রীদের চাপে এ নৌপথে চলাচল করছে ১৭টি ফেরি।

শিমুলিয়া ৩ নম্বর ফেরিঘাট টার্মিনালের ইনচার্জ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ সকাল থেকেই দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রচুর যাত্রী আসছেন। প্রতিটি ফেরিতে পাঁচ হাজারের বেশি করে যাত্রী আসছেন। যাত্রীর চাপ এতো বেশি যে ফেরিগুলোতে গাড়ি আসতে পারছে না।

ফেরি থেকে নেমেই যাত্রীরা রাজধানী ঢাকার দিকে ছুটছেন। তবে গণপরিবহন না থাকায় পথে পথে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়তে হয়
ছবি: প্রথম আলো

শিমুলিয়া ঘাটে ঢাকামুখী অন্তত ১৫ যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা জানান, বিপণিবিতানসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। শুধু দূরপাল্লার গণপরিবহন বন্ধ। এ কারণে ফেরিতে গাদাগাদি করে নদী পার হতে হচ্ছে। ভেঙে ভেঙে ছোট যানবাহনে করে যাওয়া-আসা করতে প্রচণ্ড কষ্ট হচ্ছে। ভাড়ার টাকাও গুণতে হয়েছে কয়েক গুণ। পাশাপাশি করোনা ঝুঁকি বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দূরপাল্লার যানবাহন চালু থাকলে সবার জন্য মঙ্গল হতো।

৪ নম্বর ঘাট এলাকায় কথা হয় জাকিয়া জামান নামের এক তরুণীর সঙ্গে। জাকিয়া বলেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে। তাঁরা থাকেন উত্তর বাড্ডায়। গ্রামের বাড়িতে ঈদ শেষে মা ও বোনকে নিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। যাওয়ার সময় যেমন কষ্ট করে ভেঙে ভেঙে ছোট গাড়িতে করে গিয়েছিলেন, আসার সময় সেই রকম কষ্ট করেই ফিরতে হচ্ছে। ফেরিতে গাদাগাদির অবস্থা বলা দায়।

১ নম্বর ঘাটে আবদুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, পিরোজপুর থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসতে তাঁকে পাঁচবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হয়েছে। ভ্যান, অটো, সিএনজিতে করে ঘাটে এসেছেন। এখান থেকে কর্মস্থলে যেতে আবারও কয়েকবার গাড়ি পরিবর্তন করতে হবে। তাঁর আক্ষেপ, টাকা তো যাচ্ছেই, সেই সঙ্গে এক গাড়ি থেকে নেমে মালামাল নিয়ে আরেক গাড়িতে উঠতে কী যে ভোগান্তি, তা বলে বোঝানো যাবে না।

শিমুলিয়া–বাংলাবাজার নৌপথে যাত্রীর চাপ এতো বেশি যে ফেরিগুলোতে গাড়ি আসতে পারছে না
ছবি: প্রথম আলো

শিমুলিয়া ঘাটের ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক (টিআই) এস এম জুয়েল হায়দার আজ বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, সকাল থেকে দিনভর ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ চলছে। দুপুরে কিছুটা কম ছিল। বিকেলে চাপ আরও বেড়েছে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিন এবং কাল শনিবার থেকে ঈদের ছুটি শেষে সব ধরনের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান খোলা। তাই যাঁরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে গিয়েছিলেন, তাঁরা এখন কর্মস্থলে ফিরতে শুরু করেছেন। ফলে ঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের প্রচণ্ড চাপ পড়েছে। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য ১৭টি ফেরি চলছে।