যেখানে তাঁবু, সেখানেই পড়া

সাপ ধরা আর ঝাড়ফুঁকের কাজ করে আয় হয় না। এ জন্য দলের শিশুদের নিজ উদ্যোগে পাঠদানের ব্যবস্থা করেছে বেদে সম্প্রদায়ের একটি দল।

বেদে সম্প্রদায়ের শিশুদের পাঠদান করেন নবিউল। সম্প্রতি ঠাকুরগাঁওয়ের মধুপুরে।
প্রথম আলো

মানুষ আর আগের মতো সাপের খেলা দেখে আনন্দ পায় না। ঝাড়ফুঁকের চিকিৎসাতেও আস্থা কমে গেছে। ধস নেমেছে বেদে সম্প্রদায়ের আয়-রোজগারে। তাই সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে ঠাকুরগাঁওয়ের মধুপুর গ্রামে অবস্থান করা বেদে সম্প্রদায়ের একটি দল। যখন যেখানে দলটি অবস্থান করছে, সেখানেই তাঁবু টানিয়ে চলে পাঠদান।

পাঠ দান করেন দলের সদস্য নবিউল ইসলাম। তিনি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। দলের শিশুরা যাতে শিক্ষার আলো পায়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এ কাজ তদারক করেন দলের সর্দার নবীর হোসেন (৬০)।

সদর উপজেলার মধুপুর গ্রামে বেদে সম্প্রদায়ের দলটি অবস্থান নিয়েছে সপ্তাহখানেক ধরে। প্রতিদিন কাজে বের হওয়ার আগে এবং কাজ শেষে তাঁবুতে ফিরে শিশুদের পাঠ দান করেন নবিউল।

দলটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের বাড়ি নাটোরের সিংড়া পৌরসভার পাটসিংড়া মহল্লায়। গ্রামের ১৬টি পরিবারের ৫২ জন সদস্য নবীর হোসেনের নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ান। দলটির সদস্যরা সাপ ধরা, সাপ বিক্রি, সাপে কাটা রোগীর বিষ নামানো, ঝাড়ফুঁক, তাবিজ-কবজ বিক্রি করে আয় করেন। আয়ের ওপর নির্ভর করে এলাকায় অবস্থানের সময় নির্ধারণ করা হয়। রোজগার কমে এলে তাঁরা চলে যান সুবিধামতো অন্য জায়গায়। এভাবে বছরের ৯ মাসই তাঁরা ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন স্থানে।

সম্প্রতি মধুপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সারি করে ১৬টি তাঁবু খাটানো। তাঁবুর পাশে শিশুরা গোল করে বসে উচ্চ স্বরে পড়া আয়ত্ত করছে। পাশে বসে ছিলেন দলের সর্দার নবীর হোসেন। তিনি বলেন, এভাবে আর বেশি দিন এই পেশা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। দলের শিশুরা যাতে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের ভাগ্য বদলাতে পারে, সে চিন্তা থেকেই তাঁরা পাঠদানের উদ্যোগ নিয়েছেন।

পড়াচ্ছিলেন দলের সদস্য নবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, দলের ১০ জন শিশুকে প্রতিদিন পাঠ দান করেন। সকালে কাজে বের হওয়ার আগে এবং ফিরে এসে সন্ধ্যায় ঘণ্টাখানেক পড়ার পর্ব চলে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি বর্ণমালা ও গণনা শেখান তিনি।

দলের সদস্য আবদুর রব (৫৬) বলেন, এখন দিন পাল্টেছে, সেই সঙ্গে পাল্টেছে তাঁদের ভেতরের প্রচলিত ধারণাও। তাই দলের শিশুদের লেখাপড়া শেখানোর পাশাপাশি মাদক, বহুবিবাহ, নারী নির্যাতন, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কেও সচেতন করছেন। দলের নারী সদস্য রিতা খাতুন (৪৩) বলেন,
এখন খুব বেশি আয় করে স্থায়ী ঠিকানায় ফিরতে পারবেন না। বাপ-দাদার এই পেশায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।

পুরোনো ঠাকুরগাঁও বিএম কলেজের অধ্যক্ষ আতাউর রহমান বলেন, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার মূলধারায় সম্পৃক্ত করতে এমন উদ্যোগ বড় ভূমিকা রাখবে।