যেমন আছেন কুমুদিনী হাজং

নিজ বাড়ির আঙিনায় রোদ পোহাচ্ছেন কুমুদিনী হাজং
ছবি: প্রথম আলো

টিনের চালায় হেলে পড়েছে বাগানবিলাসের গাছ। সেখান থেকে শোভা ছড়াচ্ছে ফুল। ওপর থেকে টুপটাপ ফুল ঝরে পড়ে আঙিনায়। ভোর ফুটলেই ঝরা ফুল নিজ হাতে ঝাড়ু দিয়ে সরিয়ে ফেলেন। আঙিনায় রোদ পোহাতে বসেন কুমুদিনী হাজং।

ব্রিটিশ শাসনামলে ঐতিহাসিক টংক আন্দোলন ও হাজং বিদ্রোহের সাক্ষী কুমুদিনী হাজং। নেত্রকোনার দুর্গাপুর সীমান্তে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। এখন বহেরাতলী গ্রামের গাছগাছালিতে ভরা একটি পাহাড়ি টিলায় থাকেন। সঙ্গে থাকেন মেজ ছেলে অর্জুন হাজং ও তাঁর পরিবার।

গত ২৭ ডিসেম্বর ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বয়সের ভারে ভেঙে পড়া শরীর নিয়ে রোদ পোহাচ্ছেন কুমুদিনী হাজং। চোখে কম দেখেন, কানেও শোনেন কম। কেমন আছেন, জানতে চাইলে মৃদু স্বরে হাজং ভাষায় জবাব দিলেন। ছেলে অর্জুন পাশ থেকে তরজমায় জানালেন, ‘হাঁটলে দুর্বল লাগে। কষ্ট হয়। মরতে চাই, মরি তো না।’ টংক আন্দোলনের উত্তাল দিনের স্মৃতি আর খুব একটা মনে নেই তাঁর।

বৃহত্তর ময়মনসিংহের সুসং জমিদারি এলাকায় টংক প্রথার প্রচলন ছিল। ফসল হোক বা না হোক, নির্দিষ্ট পরিমাণ ধান খাজনা হিসেবে জমিদারকে দিতে হবে। ১৯৩৭ সালে শোষিত কৃষকেরা এ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন, যা টংক আন্দোলন নামে পরিচিত।

২০০০ সালে কুমুদিনীর স্বামী লংকেশ্বরের মৃত্যু হয়। তাঁদের তিন ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে লমিন হাজং থাকেন একটু দূরে, বিজয়পুরের গুচ্ছগ্রামে। ছোট ছেলে সহদেব হাজং মুক্তিযুদ্ধের পর ভারতে চলে গেছেন। বড় মেয়ে মেনজুলি হাজং মানিকগঞ্জে ও ছোট মেয়ে অঞ্জুলী হাজং থাকেন ঢাকায়।

বেসরকারি সংস্থা দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের (ডিএসকে) নির্বাহী পরিচালক ও কমরেড মণি সিংহের ছেলে দিবালোক সিংহ বলেন, ডিএসকে থেকে কুমুদিনীকে মাসে পাঁচ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। প্রতি মাসে একজন চিকিৎসক তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন।

সমাজসেবায় অবদানের জন্য ২০১৯ সালে কুমুদিনী হাজংকে সম্মানসূচক ফেলোশিপ দেয় বাংলা একাডেমি। এ ছাড়া তিনি অনন্যা শীর্ষদশ (২০০৩), ড. আহমদ শরীফ স্মারক (২০০৫), কমরেড মণি সিংহ স্মৃতি পদক (২০০৭), সিধু-কানহু-ফুলমণি পদক (২০১০), জলসিঁড়ি (২০১৪) ও হাজং জাতীয় পুরস্কার (২০১৮) পেয়েছেন। ছেলে অর্জুন বলেন, অনেক জ্ঞানী ও বুদ্ধিজীবী তাঁর মাকে সম্মান দিয়েছেন, খোঁজ নেন। এতে তাঁরা খুশি।

কুমুদিনীর বাড়িতে বসে মুঠোফোনে কথা হয় সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) দুর্গাপুর উপজেলা কমিটির সভাপতি অজয় সাহার

সঙ্গে। তিনি বলেন, টংক আন্দোলনে হাজং সম্প্রদায়ের অনেক ত্যাগ আছে। তারা ব্রিটিশদের হাতে নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। এই অবদানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিতে কুমুদিনীকে একুশে পদক বা স্বাধীনতা পদক দেওয়ার দাবি জানান তিনি।