যে গাছের ছায়ায় দিন কাটত নিরঞ্জনের, সেই গাছ উপড়ে পড়েই মৃত্যু

ঝড়-বাতাস ছাড়াই হঠাৎ উপড়ে পড়ে কৃষ্ণচূড়াগাছটি। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের থুরী গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

প্রায় শতবর্ষী কৃষ্ণচূড়াগাছটির শীতল ছায়ায় দিনের পর দিন কেটেছে নিরঞ্জন দাসের (৪০)। গাছের গোড়ায় দেওয়া সেলুনে বসে টানা ২০ বছর ধরে চুল কেটে সংসার চালিয়েছেন তিনি। ঝড় নেই, বাতাস নেই, আজ শুক্রবার হঠাৎ উপড়ে পড়ল গাছটি। নিচে চাপা পড়ে প্রাণ গেল নিরঞ্জনের, সঙ্গে ভেঙে চুরমার হয়ে যায় তাঁর সেলুনের নানা সামগ্রী।

আজ দুপুর ১২টার দিকে জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলার আদ্রা ইউনিয়নের থুরী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত নিরঞ্জন দাস মাদারগঞ্জ উপজেলার মহিষবাতান এলাকার নরেশ চন্দ্র দাসের ছেলে। জীবিকা নির্বাহের জন্য ২৫ বছর আগে, নিজের গ্রাম ছেড়ে মেলান্দহ উপজেলার থুরী গ্রামে আসেন। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। বড় মেয়ে ও ছেলেটি লেখাপড়া করে। গাছের নিচের ওই সেলুন থেকে আয়ে চলত তাঁর পুরো সংসার।

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শতবর্ষী ওই গাছের নিচেই নিরঞ্জন দাসের একটি সেলুন ছিল। ওই সেলুনে তিনি চুল কাটতেন। প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল থেকে তিনি সেলুনে চুল কাটছিলেন। হঠাৎ গাছটি ভেঙে তাঁর সেলুনের ওপর পড়ে। এতে তিনি গাছের নিচে চাপা পড়ে মারা যান।

নিরঞ্জনের প্রতিবেশী রাজন মিয়া বলেন, ঘটনাটি অনেক নির্মম। ছোট্ট থেকে প্রতিদিন দেখেছেন, নিরঞ্জন গাছটির নিচে ছোট্ট একটি ঘর তুলে চুল কাটতেন। তিনি কানেও কম শুনতেন। তবে ভালো চুল কাটতেন। গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ তাঁর কাছেই চুল কাটতেন। ওই গাছের নিচের পাতা ও ময়লা-আবর্জনা তিনিই পরিষ্কার করতেন। গাছটির ছায়ার কারণে, গরমের মধ্যে বেশির ভাগ মানুষ তাঁর দোকানে চুল কাটতেন আরামে। আর ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস। যে গাছটি তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিল, সেই গাছটিই তাঁর প্রাণ কেড়ে নিল।

আদ্রা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, অনেক বড় শতবর্ষী গাছ ছিল। তবে শিকড়গুলো উপড়ে গিয়েছিল। গাছের গোড়াতেও মাটি কমে গিয়েছিল। ফলে ঝড়-বৃষ্টি ছাড়াই গাছটি ভেঙে পড়েছে। তবে ওই সেলুনে আরও তিনজন ব্যক্তি ছিলেন। তাঁরা গাছ পড়ার শব্দ পেয়ে, দৌড়ে প্রাণে রক্ষা পান। কিন্তু নিরঞ্জন কানে কম শুনতেন। ফলে বুঝতে পারেননি। তবে গ্রামের সবাই তাঁর মৃত্যুতে শোকাহত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনিই ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি একদম রাস্তায় নেমে গেল।