যৌন হেনস্তার অভিযোগ, আন্দোলনের মুখে শিক্ষককে তাৎক্ষণিক বদলি

বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার প্রতিষ্ঠানটির চত্বরে
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক ছাত্রী নিজ বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে যৌন হেনস্তার লিখিত অভিযোগ করার পর এক বছরেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের মুখে পাওয়ার বিভাগের ওই শিক্ষককে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি করা হয়েছে। তাঁর নাম মো. হাফিজুর রহমান।

বৃহস্পতিবার দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষককে বর্তমান কর্মস্থল থেকে পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে তাৎক্ষণিকভাবে বদলি (স্ট্যান্ড রিলিজ) করে প্রজ্ঞাপন জারি করে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ। বিভাগের উপসচিব রহিমা আক্তার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৫ জুনের মধ্যে হাফিজুর রহমানকে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, পাওয়ার বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে বছরখানেক আগে একই বিভাগের এক ছাত্রী যৌন হেনস্তার অভিযোগে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগে অশ্লীল ইঙ্গিত করে আধা ঘণ্টার জন্য বাসায় ডাকা, শ্রেণিকক্ষে বাসর রাতের গল্পের বর্ণনা, পর্ন তারকাকে নিয়ে আলোচনাসহ নানা অভিযোগ আনা হয়।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে হাফিজুর রহমান ওই ছাত্রীকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন। এত দিনেও ব্যবস্থা না নেওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ১৮ এপ্রিল অধ্যক্ষের কাছে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আরেকটি লিখিত অভিযোগ দেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, শিক্ষক হাফিজুর রহমান একই বিভাগের ছাত্রীকে যৌন হেনস্তার পাশাপাশি মানসিক নির্যাতন চালিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বাধ্য হয়ে ওই ছাত্রী বুধবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রতিকার চেয়ে একটি পোস্ট দেন। এটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হলে শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা অভিযুক্ত শিক্ষকের শাস্তি ছাড়াও আরও ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আন্দোলনরত একাধিক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষকসংকটের কারণে অতিথি শিক্ষক দিয়ে পাঠদান ও ব্যবহারিক ক্লাস নেওয়া হয়। কোনো কোনো অতিথি শিক্ষক প্রায় সময়ই ছাত্রীদের বাজে ইঙ্গিতসহ যৌন হেনস্তা করে থাকেন।

বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবু সাইম জাহান প্রথম আলোকে বলেন, পাওয়ার বিভাগের চিফ ইন্সট্রাক্টর মো. হাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল।

আবু সাইম জাহান আরও বলেন, আজ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলনের ঘোষণা দিলে কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বিষয়টি জানানো হয়। পরে দুপুরে অভিযুক্ত শিক্ষককে বদলির প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।