রক্তিমের মৃত্যুতে কান্না থামছে না মায়ের

১৫ দিন আগে একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন মা মানু রানী সুশীল। আজ মঙ্গলবার সকালে হারালেন আরেক ছেলে রক্তিম সুশীলকে
প্রথম আলো ফাইল ছবি

টানা ১৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে কক্সবাজারের চকরিয়ার মালুমঘাট এলাকায় পিকআপের ধাক্কায় গুরুতর আহত রক্তিম সুশীল (৩১) মারা গেছেন। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তিনি মারা যান। ৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের মালুমঘাটে পিকআপের ধাক্কায় রক্তিমের পাঁচ ভাই মারা যান। আহত হয়েছিলেন রক্তিম, ভাই প্লাবন ও বোন হীরা। আজ রক্তিমও অপর পাঁচ ভাইয়ের পথ ধরলেন।

রক্তিমের মৃত্যুর খবর প্রথম আলোকে নিশ্চিত করে তাঁর ছোট বোন মুন্নী সুশীলের স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র বলেন, আজ বিকেলে মালুমঘাট শ্মশানে রক্তিমের শেষকৃত্য হবে। আরেক ছেলেকে হারিয়ে কান্না থামছে না মা মানু রানী সুশীলের।

স্বামীর মৃত্যুর ১০ দিনের মাথায় একসঙ্গে পাঁচ ছেলেকে হারান মানু রানী। যে দুর্ঘটনা মানু রানীর পাঁচ সন্তানকে কেড়ে নিল, সেই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন তাঁর আরেক ছেলে রক্তিম। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত শুক্রবার রাতে হাসপাতালে ছেলে রক্তিমকে দেখতে যান মা। গতকাল সোমবার ফিরে আসেন চকরিয়ার মালুমঘাটের বাড়িতে। ছেলের সুস্থতার জন্য প্রার্থনা ছিল তাঁর মুখে।
ওই দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান রক্তিমের বোন মুন্নী সুশীল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতালের আইসিইউতে রক্তিমকে পড়ে থাকতে দেখে মা খুব কান্নাকাটি করেছিলেন। মায়ের আশা ছিল, ঈশ্বরের কৃপায় রক্তিম চোখ মেলে তাকাবেন, মা বলে ডাকবেন। কিন্তু তা আর হলো না। ঈশ্বর আমাদের আর কত পরীক্ষা নেবেন, জানি না। মায়ের কান্না থামছে না।’

আরও পড়ুন

মুন্নী সুশীল আরও বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর স্বামী খগেশপ্রতি চন্দ্র। তাঁকে বান্দরবানের লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। দুর্ঘটনায় খগেশপ্রতির ঠোঁট ও হাতে জখম হয়, সেলাই দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ভাই রক্তিমের মৃত্যুর সংবাদ শুনে আজ সকালে লামা থেকে চকরিয়ায় মায়ের কাছে ছুটে এসেছেন মুন্নী।

৮ ফেব্রুয়ারি ভোরে ১০ দিন আগে মারা যাওয়া বাবার শ্রাদ্ধকর্ম সেরে বাড়িতে ফিরছিলেন ভাইবোনেরা। দুর্ঘটনায় পাঁচ ভাই অনুপম সুশীল (৪৬), নিরুপম সুশীল (৪০), দীপক সুশীল (৩৫), চম্পক সুশীল (৩০) ও স্মরণ সুশীল (২৯) ওই দিন মারা যান। বছর দুয়েক আগে অপর এক ভাই অসুস্থ হয়ে মারা যান। সবার ছোট প্লাবন এবার এইচএসসি পাস করেছেন। তিনি দুর্ঘটনায় সামান্য আহত হয়েছিলেন। হাসপাতাল থেকে প্লাবন বাড়ি ফিরেছেন। তাঁদের আরেক বোন হীরা সুশীল কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আরও পড়ুন

এ ঘটনায় চকরিয়া থানায় দায়ের করা মামলায় রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে পিকআপটির চালক সাইফুলকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে নেয় মামলার তদন্তকারী সংস্থা হাইওয়ে পুলিশ। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতের মাধ্যমে সাইফুলকে কারাগারে পাঠানো হয়। সাইফুলের বাড়ি বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাপেরগাড়া এলাকায়।

মালুমঘাট হাইওয়ে থানার ইনচার্জ পরিদর্শক শেফায়েত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পিকআপের চাপায় পাঁচ ভাইকে মারার ঘটনা স্বীকার করেছেন সাইফুল। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার কারণে তিনি রাস্তার পাশে দাঁড়ানো লোকজনকে দেখতে পাননি। খুব কাছাকাছি এসে যখন দেখতে পান, তখন দ্রুতগতিতে ছুটে চলা গাড়িটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি।