রঙিন মাছে স্বপ্ন বুনছেন রাখাইন তরুণ

পড়াশোনার পাশাপাশি শখের মাছ পালনের মাধ্যমে বাড়তি টাকা আয় করছেন উমংছেন প্রকাশ
ছবি: প্রথম আলো

কক্সবাজার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাণিজ্যিক এলাকা পূর্ববাজার ঘাটা। পূর্ব দিকে অ্যাডভোকেট সালামত উল্লাহ সড়কে চিং নোং রাখাইনের একতলা পাকাবাড়ি। ওই বাড়ির একটি কক্ষে প্রায় ৩০টি অ্যাকুয়ারিয়াম সাজিয়ে রাখা। প্রতিটি অ্যাকুয়ারিয়ামে বিভিন্ন প্রজাতির রঙিন মাছ সাঁতার কাটছে। মাছের ছোটাছুটি দেখতে প্রায় সময়ই ওই বাড়িতে বিভিন্ন বয়সের মানুষের ভিড় লেগে থাকে।

মূলত অ্যাকুয়ারিয়ামগুলো রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী চিং নোংয়ের একমাত্র ছেলে উমংছেন প্রকাশ উমংয়ের (২১)। বছর পাঁচেক আগে স্কুলে পড়ার সময় উমংছেন প্রকাশ টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ৩০০ টাকা দিয়ে এক জোড়া রঙিন মাছ কিনেছিলেন। পরে ইন্টারনেট ঘেঁটে তিনি রঙিন মাছ প্রজননের পদ্ধতি শিখে ফেলেন। শখের বসে শুরু করা মাছ পালনকে এখন বাণিজ্যিক রূপ দিয়েছেন উমংছেন প্রকাশ। ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি উমংছেন প্রকাশ শখের মাছ পালনের মাধ্যমে বাড়তি কিছু টাকা আয় করছেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে উমংছেনের ঘরে গিয়ে দেখা গেল, বেশ কয়েকজন ক্রেতা রঙিন মাছ কিনতে এসেছেন। বয়স অনুপাতে প্রতি জোড়া রঙিন মাছের দাম ১০০ থেকে ২০০ টাকা। উমংছেন জানালেন, একসময় রঙিন এই মাছের বাজার শহরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। তবে এখন কুরিয়ারের মাধ্যমে সরবরাহ হচ্ছে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, বরিশাল, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে তিনি মাছ বিক্রি করছেন। ‘উ মং ফিশ রুম’ নামের একটি ফেসবুক পেজের মাধ্যমে অনলাইনে মাছ বিক্রি করেন তিনি।

দেখা গেছে, চট্টগ্রামের সিইপিজেড এলাকার সম্রাট নামের একজন অর্ডার করেন ২৫টি রঙিন মাছের। কেরানীগঞ্জের সাইফুল ইসলাম ১৫টি, কিশোরগঞ্জের মুন্না অর্ডার করেন ২০টি মাছের।

উমংছেন বলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি প্লাস্টিকের বোতলে রঙিন মাছ রাখতেন। তখন কাচের অ্যাকুয়ারিয়াম কেনার সামর্থ্য ছিল না। ২০১৭ সালের জুন মাসে শহরের বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম মার্কেটের অ্যাকুয়ারিয়ামের দোকান থেকে ৩০০ টাকা দিয়ে এক জোড়া রঙিন মাছ কিনেছিলেন। টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে ওই মাছ জোড়া কিনেছিলেন তিনি। কয়েক মাস যেতে না যেতেই রঙিন মাছ থেকে ডিম ফোটানোর চিন্তা চলে আসে মাথায়। পরে বাবার মুঠোফোনের ইন্টারনেট কাজে লাগিয়ে মাছের ডিম ফোটানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানলেন। ২০২০ সালের মার্চ থেকে রঙিন মাছ থেকে ডিম ফোটানোর কাজ শুরু করলেন তিনি। অল্প কয়েক দিনের মধ্যে অ্যাকুয়ারিয়াম ভরে যায় রঙিন মাছে। কিন্তু তখন করোনা মহামারির কারণে দেশজুড়ে শুরু হলো লকডাউন, কঠোর বিধিনিষেধ।

টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এক জোড়া রঙিন মাছ দিয়ে শুরু। এখন ৩০টি অ্যাকুয়ারিয়ামে উমংছেন প্রকাশের সংগ্রহে অন্তত ১ হাজার ২০০ রঙিন মাছ আছে
ছবি: প্রথম আলো

কিছুদিন গৃহবন্দী থাকার পর অনলাইনে মাছ বিক্রি শুরু করেন উমংছেন। ধীরে ধীরে মাছের চাহিদা বাড়তে থাকে। বর্তমানে ৩০টি অ্যাকুয়ারিয়ামে সংরক্ষিত আছে অন্তত ১ হাজার ২০০ রঙিন মাছ। যার বাজারমূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা বলে জানালেন উমংছেন।

বর্তমানে উমং কক্সবাজার সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি স্বল্প পরিসরে রঙিন মাছ পালন করে ছাত্রছাত্রীরা প্রতি মাসের পকেট খরচ আয় করতে পারেন বলে মনে করেন তিনি।

উমংছেন বলেন, রঙিন মাছ বিক্রি করে প্রতি মাসে অনায়াসে পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা লাভ হয়। পড়াশোনা শেষে যেন বেকার বসে থাকতে না হয়, সে জন্য তিনি আগে থেকেই এই ব্যবসা শুরু করেছেন। ভবিষ্যতে রঙিন মাছ উৎপাদন ও বিপণনের কলেবর বৃদ্ধির পরিকল্পনা আছে জানিয়ে উমংছেন বলেন, শহরে এখন রঙিন মাছের চাহিদা বাড়ছে। ঘরে ঘরে রঙিন মাছভর্তি অ্যাকুয়ারিয়াম শোভা পাচ্ছে। এসব মাছের খাবারও সহজলভ্য। তাই স্বল্প পুঁজি আর অল্প জায়গা নিয়েই বেকার তরুণেরা মাছ চাষ শুরু করতে পারেন।