রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রারসহ ৩০ শিক্ষক-কর্মচারী অবরুদ্ধ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারসহ ৩০ শিক্ষক–কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পৌর শহরের বিসিক মোড় এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী একাডেমিক ভবন-১ শাহজাদপুর মহিলা কলেজে রোববার দুপুর থেকে এ প্রতিবেদন লেখার সময় রাত ১০টা পর্যন্ত তাঁরা অবরুদ্ধ ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস জানান, রোববার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ডাকে সাড়া দিয়ে চলমান পরিরস্থিতির বিষয়ে শিক্ষার্থীদের বোঝাতে তাঁরা একাডেমিক ভবনে যান। সেখানে যাওয়ার পর তিনজন নারী শিক্ষক, রেজিস্ট্রারসহ মোট ৩০ জন শিক্ষক–কর্মচারীকে অবরুদ্ধ করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী রোববার রাতে আটটায় অবরুদ্ধ অবস্থায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘২২ অক্টোবর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সিদ্ধান্তের জন্য ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভা হয়েছে। সভায় বিভিন্ন আইনের বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই সভা সাময়িক মুলতবি করা হয়। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানানো হলে তাঁরা বিষয়টি বিশ্বাস না করে দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষক ফারহানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নিলে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন। এ কারণে তাঁদের বোঝাতে একাডেমিক ভবনে এলে তাঁরা আমাদের অবরুদ্ধ করেন।’
এদিকে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কাটার ঘটনায় শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে আবারও উত্তাল ক্যাম্পাস। রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ভবনগুলোতে তালা দিয়ে বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরের দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে দুজন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, দুই দিন ধরে আমরণ অনশনে আছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। রোববার সকালে পৌর শহরের বিসিক মোড় এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন এবং কান্দাপাড়া এলাকায় প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বাইরে অবস্থান নেন তাঁরা। তাঁরা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বহিষ্কার দাবিতে বিক্ষোভ করছেন। শুক্রবার গভীর রাত থেকেই আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র শামীম হোসেন বলেন, ‘আমাদের ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কালক্ষেপণ করছে। সিদ্ধান্ত ছাড়া সিন্ডিকেট সভা শেষ করা হয়েছে। আবার কবে সভা বসবে, তা অনিশ্চিত। বাধ্য হয়ে আমরা কঠোর আন্দোলনে নেমেছি। আজকের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেউ কেউ আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।’
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে থাকা কোষাধ্যক্ষ আবদুল লতিফ বলেন, ‘রেজিস্ট্রার শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলছেন। আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি।’
গত ২৬ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১৪ শিক্ষার্থীর মাথার চুল ওই বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহকারী প্রক্টর ফারহানা ইয়াসমিন কেটে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ২৮ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা সব পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান, সহকারী প্রক্টর ও সিন্ডিকেট সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন ফারহানা ইয়াসমিন। একই সঙ্গে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।