রাস্তায় পড়ে থাকা ল্যাপটপ ফেরত দিলেন অটোরিকশাচালক

অটোরিকশাচালক আমির উদ্দিনের সততা দেখে তাঁকে পুরস্কৃত করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

৪ ফেব্রুয়ারি রাতে ল্যাপটপসহ একটি ব্যাগ হারিয়ে ফেলেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার মোয়াজ্জেম হোসেন। ওই ব্যাগে একটি  ল্যাপটপ, ব্যাংকের চেকবই, পরিচয়পত্রসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ছিল। সাত দিন ধরে খোঁজাখুঁজি করেও ওই ব্যাগের কোনো সন্ধান মেলেনি।  

গতকাল শুক্রবার মোয়াজ্জেম হোসেনের মুঠোফোনে একটি কল আসে। ফোনের ওপার থেকে জানানো হয় অটোরিকশাচালক আমির উদ্দিন তাঁর ব্যাগটি কুড়িয়ে পেয়েছেন। পরে আমির উদ্দিন গতকাল সন্ধ্যায় মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে ব্যাগটি পৌঁছে দেন।

আমির উদ্দিন নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার বাইশপুকুর গ্রামের বাসিন্দা। ৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আমির উদ্দিন তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস সড়কে ব্যাগটি কুড়িয়ে পান।

মোয়াজ্জেম হোসেন হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ এলাকার বাসিন্দা। তিনি সেনাকল্যাণ সংস্থায় চাকরি করেন। মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় মোয়াজ্জেম হোসেন সপরিবার অটোরিকশাযোগে হাতীবান্ধার তিস্তা ব্যারাজ হয়ে নীলফামারী জলঢাকা উপজেলায় যাচ্ছিলেন। এ সময় পথে তিস্তা ব্যারাজ ফ্লাড বাইপাস সড়কে ল্যাপটপসহ তাঁর ব্যাগটি পড়ে যায়। পরে তিনি অনেক খোঁজাখুঁজি করে ব্যাগটি খুঁজে পাননি।

আমির উদ্দিন বলেন, ওই ব্যাগের ভেতর ল্যাপটপ ও অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে তিনি মোয়াজ্জেম হোসেনের পরিচয়পত্র খুঁজে পান। তবে সেনাকল্যাণ সংস্থার পরিচয়পত্র দেখে তিনি ভয়ে বিষয়টি পুলিশকে জানাননি। পরে গ্রামবাসীর পরামর্শে আমির উদ্দিন সেনাকল্যাণ সংস্থার বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ে যোগাযোগ করেন ব্যাগ কুড়িয়ে পাওয়ার বিষয়টি জানান। পরে সেনাকল্যাণ সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশকে বিষয়টি জানানো হলে আমির উদ্দিন ব্যাগটি মোয়াজ্জেম হোসেনের কাছে পৌঁছে দেন।

গতকাল সন্ধ্যায় ব্যাগ হস্তান্তরের সময় হাতীবান্ধা থানার ওসির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দোয়ানী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ও উপপরিদর্শক (এসআই) আবু বক্কর সিদ্দিক, ডিমলা থানার ওসির পক্ষে উপপরিদর্শক (এসআই) রোস্তম আলীসহ এলাকার স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এ সময় মোয়াজ্জেম হোসেন আমির উদ্দিনকে আর্থিক পুরস্কার দেন।

আমির উদ্দিনের সততার বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘ল্যাপটপসহ অন্যান্য জিনিসপত্র ফিরে পেয়ে আমি আমির উদ্দিনের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁর এ সততাকে সামনে রেখে আজীবন আমি নিঃস্বার্থভাবে মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করব। তিনি ল্যাপটপসহ সবকিছু ফেরত দিয়ে অনন্য নজির স্থাপন করলেন।’

পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, অটোরিকশাচালক আমির উদ্দিন আর্থিকভাবে অসচ্ছল হলেও তিনি অনেক সৎ ও বড় মনের অধিকারী। এ জন্য এত কিছু কুড়িয়ে পাওয়ার পরও তিনি ফেরত দিয়ে সবাইকে লোভ ত্যাগ করার পথ দেখালেন। পুলিশ বিভাগও আমির হোসেনের প্রতি কৃতজ্ঞ।