রায়হান হত্যা মামলার অভিযোগপত্রে ‘অসন্তুষ্ট’ মা

পুলিশ ফাঁড়িতে নির্যাতনে নিহত রায়হান আহমদের মা সালমা বেগম
প্রথম আলো

সিলেটের বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান আহমদকে (৩৪) হত্যা মামলায় দেওয়া অভিযোগপত্রে ‘অসন্তুষ্ট’ হয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছেন তাঁর মা সালমা বেগম। তিনি অভিযোগ করেন, অভিযোগপত্রে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত আরও কয়েকজনকে বাদ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগপত্রে রায়হানের নামে আরও কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলো বানোয়াট এবং সাজানো বলে মনে হয়েছে। তবে অভিযোগপত্র আদালত থেকে উঠিয়ে পর্যালোচনার পর আইনজীবীর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।

আজ বুধবার দুপুরে আদালতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার পর প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সালমা বেগম এসব কথা জানান।

সালমা বেগম বলেন, ‘আমরা অভিযোগপত্রের জন্য প্রায় সাত মাস অপেক্ষা করেছি। আশা করেছিলাম নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে একটি ভালো ফলাফল পাব। কিন্তু যে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে সেটি আসামিদের পক্ষে চলে গেছে। রায়হানকে মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসায়ী কিংবা ছিনতাইকারীর সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যা আমাদের কাছে বানোয়াট ও সাজানো বলে মনে হয়েছে। যদি ছিনতাই কিংবা মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকত, তাহলে সেদিন আমাদের সঙ্গে রায়হানকে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি কেন? সে সময় যদি আমাদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হতো তখন আমরা জিজ্ঞেস করতে পারতাম। এখন রায়হান মারা যাওয়ার পর বিভিন্ন বিষয়ে বলা হচ্ছে। যেগুলো রায়হান জীবিত না থাকায় আমাদের প্রমাণ করতে কষ্ট হবে। রায়হানের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের খবর দেওয়া হয়েছে। তবে প্রথম দিকে আমাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। যাতে আমরা ঘটনার কিছুই জানতে পারিনি।’

অভিযোগপত্রে পাঁচ পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করা প্রসঙ্গে সালমা বেগম বলেন, অভিযুক্তদের মধ্যে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির পুলিশ সদস্য (কনস্টেবল) তৌহিদ মিয়ার মুঠোফোন থেকে ফোন দিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল রায়হান। কিন্তু অভিযোগপত্রে তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়নি। সে সঙ্গে কুতুব আলী নামের এক পুলিশ সদস্যকেও অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হয়নি। ঘটনায় অভিযোগকারী হিসেবে সাইদুল শেখ ও রনি শেখকেও অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত করা হয়নি।

পিবিআইয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে রায়হানের বিরুদ্ধে দুটি মামলার কথা উল্লেখ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের দুটি ভাড়া বাসা ছিল। সেখানে ভাড়া আনতে গিয়ে রায়হানকে সন্দেহজনক হিসেবে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সে সময় ভাড়াটেরা পালিয়ে গেলে ভাড়া আনতে যাওয়া রায়হানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। যারা ভাড়া ছিল তারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে। তবে রায়হানকে কোনো সময় মাদক সেবন করতে দেখেননি কিংবা শোনেননি বলে জানান তিনি। যা পোস্ট মর্টেমের প্রতিবেদনেও আসেনি।’

রায়হানের মামাতো ভাই মো. আবদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘রায়হান আমার সমবয়সী। তাঁর সঙ্গে চলাফেরায় কখনো তাঁকে মাদক সেবন করতে দেখিনি।’ এরপরও তাঁর মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টর কথা অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে জানান তিনি।

গত ২৫ অক্টোবর পুলিশের নির্যাতনে রায়হান আহমদের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের সবাইকে গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বন্দর বাজার ফাঁড়ির সামনে আমরণ অনশনে বসেছিলেন মা সালমা বেগমসহ পরিবারের সদস্যরা। অনশনটি পরে বিক্ষোভে পরিণত হয়।

রায়হানের পরিবারের পক্ষের আইনজীবী এম এ ফজল চৌধুরী বলেন,‘ আজকে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল হয়েছে। আমরা সেটি এখনো হাতে পাইনি। সে জন্য এ নিয়ে বক্তব্য দেওয়া ঠিক হবে না। অভিযোগপত্র পাওয়ার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

আদালতে দেওয়া অভিযোগপত্রে বন্দর বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আকবর হোসেন ভূঁইয়াকে (৩২) প্রধান অভিযুক্ত করে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আশেক এলাহী (৪৩), কনস্টেবল মো. হারুন অর রশিদ (৩২), টিটু চন্দ্র দাস (৩৮), ফাঁড়ির ‘টুইআইসি’ সাময়িক বরখাস্ত উপপরিদর্শক মো. হাসান উদ্দিন (৩২) ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সংবাদকর্মী আবদুল্লাহ আল নোমানকে (৩২) অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তদের মধ্যে পাঁচ সাময়িক বরখাস্ত পুলিশ সদস্য জেলহাজতে এবং আবদুল্লাহ আল নোমান পলাতক রয়েছেন বলে জানানো হয়।