রেডিওগ্রাফার না থাকায় এক্স-রে বন্ধ, ভোগান্তি

সাড়ে চার বছর ধরে হাসপাতালে এক্স-রে করা হয় না। অথচ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি এক্স-রে মেশিন আছে।

নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুটি এক্স-রে মেশিন আছে। দুটি মেশিনই সচল। কিন্তু রেডিওগ্রাফার না থাকায় মেশিন দুটি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে সাড়ে চার বছর ধরে হাসপাতালে এক্স-রে করা হয় না। রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা দিয়ে এক্স-রে করাতে হচ্ছে।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল মেশিনে এক্স-রে করাতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। আর অ্যানালগে খরচ অর্ধেক। গতকাল শনিবার সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত হাসপাতালের বহির্বিভাগে ৫৬ জন রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। তাঁদের মধ্যে চিকিৎসক অন্তত সাতজনকে এক্স-রে করাতে পরামর্শ দেন।

উপজেলার বড়পারুয়া গ্রামের ফজলু মিয়া (৫৮) বেলা একটার দিকে বলেন, বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন। চিকিৎসক বলছেন এক্স-রে করাতে। পরে প্রাইভেট ক্লিনিকে ৪২০ টাকা দিয়ে এক্স-রে করিয়েছেন।

খারনৈ এলাকার নার্গিস আক্তার বলেন, ইজিবাইক থেকে পড়ে তিনি হাতে ব্যথা পেয়েছিলেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে গেলে চিকিৎসক তাঁকে এক্স-রে করাতে বলেন। তিনি জেলা শহরের মোক্তারপাড়া এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে পরীক্ষা করান। এতে তাঁর ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। শহরে যাওয়া-আসার ভাড়া সব মিলিয়ে তাঁর ১ হাজার ২০০ টাকা খরচ হয়েছে।

রোগীরা বলেন, উপজেলা হাসপাতালে এক্স-রে মেশিন চালু থাকলে তাঁরা দু-তিন গুণ কম খরচে পরীক্ষা করাতে পারতেন। যাতায়াতেও এতে ভোগান্তি হতো না।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, কলমাকান্দার আটটি ইউনিয়নে প্রায় ২ লাখ ৭৫ হাজার মানুষের বাস। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৫ সালে একটি এক্স-রে মেশিন বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। সেটি দিয়েই চলছিল চিকিৎসাসেবা। কিন্তু হাসপাতালের রেডিওগ্রাফার পদে দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ আশ্রাফুজ্জামান ২০১৬ সালের ১০ আগস্ট টাঙ্গাইল জেলা সদর হাসপাতালে প্রেষণে যান। তাঁর প্রেষণ বাতিল চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তিনবার চিঠি দেয়। সম্প্রতি তিনি সেখানে স্থায়ীভাবে যোগ দিয়েছেন। আশ্রাফুজ্জামান চলে যাওয়ার পর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে মেশিনটি অযত্নে-অবহেলায় পড়ে আছে। এর মধ্যে গত বছরের জানুয়ারিতে হাসপাতালে ৫০০ এমএ মানের আরও একটি অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন স্বাস্থ্য বিভাগ বরাদ্দ দেয়। মেশিনটি এখনো বাক্সবন্দী করে রাখা হয়েছে।

■ সরকারি হাসপাতালে ডিজিটাল মেশিনে এক্স-রে করাতে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা নেওয়া হয়। ■ বেসরকারি ক্লিনিকে এক্স–রে করাতে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা খরচ হয় ।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, হাসপাতালে দুটি এক্স-রে মেশিন থাকার পরও শুধু একজন রেডিওগ্রাফারের জন্য তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রতি মাসেই বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল খালেক বলেন, এই অঞ্চলের বেশির ভাগ রোগী সড়ক দুর্ঘটনায় জখম ও মারামারির ঘটনা নিয়ে হাসপাতালে যান। তাঁদের মধ্যে অনেককে চিকিৎসক এক্স-রে করাতে পরামর্শ দেন। হাসপাতাল থেকে বাইরে রোগী নিয়ে গিয়ে এক্স-রে করানো জটিল কাজ। হাসপাতালে রেডিওগ্রাফার না থাকার বিষয়টি তাঁরা স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভিন্ন সভায় তুলেছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

সিভিল সার্জন মো. সেলিম মিয়া বলেন, এ বিষয়ে তিনি গত মাসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছেন। শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।