রেলওয়ে স্টেশনে তরুণীকে হেনস্তা, ‘অভিযোগ না পাওয়ায়’ তৎপরতা নেই পুলিশের

যৌন হয়রানি
প্রতীকী ছবি

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তা করার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। রাজধানী ঢাকা থেকে নরসিংদীতে বেড়াতে আসা ওই তরুণী ও দুই তরুণের সঙ্গে স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গত বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে এই ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় কয়েকজন লোকের গালিগালাজ, হেনস্তা ও মারধরের মুখে ওই তরুণ-তরুণীরা স্টেশনমাস্টারের কক্ষে আশ্রয় নেন। পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন দিলে নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাঁদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়। ভুক্তভোগী তরুণ-তরুণী ও হেনস্তাকারী কারও পরিচয় এখনো জানা যায়নি।

ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। তবে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে ‘কোনো অভিযোগ না পাওয়ার’ কারণ দেখিয়ে এ ঘটনায় দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শাহেদ আলী পাঠান আজ শুক্রবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি গণমাধ্যমের মাধ্যমে তাঁরা জেনেছেন। এটি যেহেতু রেলওয়ে স্টেশনে হয়েছে তাই রেলপুলিশ বিষয়টি দেখবে।

তবে হেনস্তাকারীদের শনাক্তে নিজেদের ‘অপারগতা’র কথা জানিয়েছে রেলপুলিশ। ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদাউস আহমেদ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনা শুনেছেন। কিন্তু ভুক্তভোগী বা ঘটনায় জড়িত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। এ বিষয়টি তাঁরা তদন্ত করে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অনাকাঙ্খিত ও দুঃখজনক ছিল। তবে আমাদের কাছে চলে আসার পর তাঁরা (তরুণ-তরুণী) নিরাপদেই ছিলেন। এই ঘটনায় আমাদের কাছে ভুক্তভোগী বা তাঁর কোনো আত্মীয়-স্বজন এখনো পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ দেননি। তাই আমরা এই ঘটনায় কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তারপরও যদি কিছু করার থাকে তাহলে পুলিশ করবে।’

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল সোয়া ৫টার দিকে স্টেশনে আসেন ওই তরুণী ও দুই তরুণ। পৌনে ৬টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। এসময় স্টেশনে মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এটা কি পোশাক পরেছো তুমি’। তরুণীও পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হয়। এর মধ্যে সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত অন্য কয়েকজন ব্যক্তি।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছেন একদল ব্যক্তি। এর মধ্যেই এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তাঁর সঙ্গে কথা বলছেন। বয়স্ক এক ব্যক্তিও তাঁর পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে ওই নারী দৌঁড়ে তাঁকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালাগালি করতে করতে তাঁর পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনরকমে নিজেকে সামলে দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান তরুণী। এ সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে। পরে তাঁরাও দৌড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান। ওই সময়ও তাঁদের লক্ষ্য করে গালাগালি করছিলেন ওই নারী।

নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এটিএম মুসা প্রথম আলোকে বলেন, ‘পোশাক নিয়ে এক নারীর সঙ্গে ওই তরুণীর কথা কাটাকাটি হয়। পরে তরুণীকে শ্লীলতাহানি ও তরুণদের মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় তারা স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঢুকে পড়লে আমরা তাঁদের আশ্রয় দিই। পরে পৌনে ৬টার দিকে তাঁদের পুলিশের সহায়তায় ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনে উঠিয়ে দেওয়া হয়।’

এ ঘটনার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন নেটিজেনরা। নরসিংদীর সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাদিরা ইয়াসমিন তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘ভিডিওটি দেখে বোঝা গেল, ঘটনার সময় অসংখ্য মানুষ জড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে শুধু দেখছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে আসেনি। একজন নারী কী পোশাক পরে বাইরে যাবেন, এটা একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’