চাঁপাইনবাবগঞ্জে আজ মঙ্গলবার সপ্তাহব্যাপী বিশেষ লকডাউনের প্রথম দিন। সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন স্থানে জেলা প্রশাসনের টহল দলকে দেখা গেল। শহরের সব কটি প্রবেশপথেই বসানো হয়েছে পুলিশের তল্লাশিচৌকি। শহরে খাবারের দোকান ছাড়া আর সব দোকানপাট বন্ধ দেখা গেছে। রাস্তাঘাটে লোকজন ও যানবাহন চলাচল ছিল খুবই কম।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছেন। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় এবং মাস্ক না পরায় অনেককে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ।
করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন। এ সময় জেলায় দোকানপাট বন্ধ থাকার পাশাপাশি আন্তজেলা সড়ক যোগাযোগও বন্ধ থাকার কথা। লকডাউন কার্যকর করতে গতকাল সোমবার ১১ দফা নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী এ জেলায় করোনা সংক্রমণের হার অনেক বেশি। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে নমুনা পরীক্ষার গড় হিসাবে দেখা যাচ্ছে, দুজনের মধ্যে একজনের (৫৯ শতাংশ) করোনা শনাক্ত হচ্ছে। অথচ গত এক সপ্তাহে শনাক্তের জাতীয় হার ৯ শতাংশের নিচে।
আজ সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া লোকজনকে পুলিশের জেরার মুখে পড়তে দেখা গেছে। তাঁদের পুনরায় বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শহরের বিশ্বরোড ও সিসিডির মোড়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে। শান্তির মোড়ে দেখা যায়, শহরে ঢোকার প্রবেশপথে বাঁশ দিয়ে পথ আটকে দেওয়া হয়েছে। পানিবাহী ভ্যানকেও ফিরিয়ে দিতে দেখা গেছে।
সকালে সিসিডির মোড়ে ফলের এক দোকানদার বললেন, পুলিশ তাঁদের দোকান বন্ধ রাখতে বলে গেছে। অন্যদিকে শহরের হাসপাতাল সড়কের পাশে আম বাজারে গিয়ে দেখা যায়, আমের আমদানি খুবই কম। ক্রেতাও খুব একটা নেই। এখানে কথা হয় আম ব্যবসায়ী সুকুমার প্রামাণিক, রাসেল আলী ও বাহারাম আলীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, বাজারে আম নেমেছে কম। ক্রেতাও তেমন নেই। গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে। এ দর নিয়ে তাঁরা খুব একটা সন্তুষ্ট নন।
এখন আমের মৌসুম। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আমের জন্য বিখ্যাত। আমের ব্যাপারে গতকাল জেলা প্রশাসক বলেছেন, আমের বাজার বসবে; তবে সেটা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। আম পরিবহনের ক্ষেত্রে বাগান থেকে আম ট্রাকে করে পরিবহন করা যাবে, সেই সঙ্গে কুরিয়ারের মাধ্যমে আম পরিবহন করা যাবে। কলকারখানা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। শ্রমিকদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় আনা-নেওয়া করতে হবে।
আম ব্যবসায়ী বাহারাম আলী বললেন, ভ্যানে করে বাজারে আম নিয়ে আসা এক রিকশা ভ্যান ফিরে যাওয়ার সময় পুলিশের এক কনস্টেবল লোহার ছুঁচালো দণ্ড দিয়ে ভ্যানের তিনটি চাকা ফুটো করে দিয়েছেন। তেমনি কাঁচাবাজারে সবজি নিয়ে আসা প্রতিবন্ধী এক ভ্যানচালকের ভ্যানের চাকাও ফুটো করে দিতে দেখেছেন তিনি। প্রতিবাদ করেও কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে লকডাউনের কারণে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলস্টেশনে চলাচলকারী একমাত্র বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও আজ সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চলেনি। আগামী সাত দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ট্রেনটি বন্ধ থাকলেও রাজশাহী থেকে চলবে বলে জানা গেছে। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে রাজশাহী ও নওগাঁয় গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকলেও অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশায় চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে রাস্তায় কিছু খাদ্যপণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করতে দেখা গেছে। এগুলো লকডাউনের আওতার বাইরে।