লাখ টাকার গরুর চামড়া ১০০ টাকা

কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির জন্য পরিস্কার করা হয়। বুধবার বিকেলে কুমিল্লার দাউদকান্দির পেন্নাই ঈদগাহ মাদ্রাসা মাঠে।
ছবি: প্রথম আলো

কোরবানি দেওয়ার জন্য যে গরু ১ লাখের বেশি দামে কেনা হয়েছিল, তার চামড়া মাত্র ১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা। চামড়ার দাম এতটা কম হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন বিভিন্ন এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা। কারণ, এসব এতিমখানার বার্ষিক আয়ের অন্যতম উৎস এলাকাবাসীর দান করা কোরবানির পশুর চামড়া।

উপজেলার আদমপুর, সুন্দলপুর, পশ্চিম কাউদিয়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামগুলোর অনেকে কোরবানি দেওয়ার জন্য ১ লাখ বা এর বেশি দামে পশু কিনেছিলেন। তাঁরা সে পশুর চামড়া বিক্রি করেছেন ১০০ টাকায়। আদমপুর গ্রামের মতিন সৈকত বলেন, তাঁর কোরবানির পশুর চামড়াও এই দামে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

সুন্দলপুর গ্রামের ফরহাদ প্রধান, পশ্চিম কাউয়াদি গ্রামের মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন, সময়মতো চামড়া বিক্রি করতে না পারলে সংরক্ষণের অভাবে তা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই ক্রেতাদের সঙ্গে দর–কষাকষি করলেও কম দামেই বিক্রি করতে হয়।

পশ্চিম কাউয়াদি গ্রামের কালু প্রধান বলেন, তাঁর ১ লাখ ২ হাজার টাকার গরুর চামড়া ১৫০ টাকায় বিক্রি করেছেন। তিনপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রকিব উদ্দিনের কেনা গরুর দাম ছিল ১ লাখ ১২ হাজার টাকা। চামড়া বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। পুরাতন বাতাকান্দি গ্রামের ফরিদ মিয়া ২ লাখ ১০ হাজার টাকায় কেনা গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ১৮০ টাকায়।

গ্রামে গ্রামে ঘুরে কোরবানির পশুর চামড়া কেনেন মৌসুমি ব্যবসায়ী নুরু মিয়া। তাঁর বাড়ি সুন্দলপুর গ্রামে। তিনি তাঁর গ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা দামে পশুর চামড়া কিনেছেন। বাসরা গ্রামের আলী আহমেদ মিয়াজী ১ হাজার গরুর চামড়া কিনেছেন। সব কটির দাম গড়ে ১০০ থেকে ২৫০ টাকা।

এসব ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে একটি চামড়া ১০০ টাকায় কিনলেও সংরক্ষণের খরচসহ গড়ে দাম পড়ে ২০০ টাকা। ঢাকায় নিতে প্রতি চামড়ায় ৩৫ টাকা খরচ হয়। লাভের আশায় তাঁরা পশুর চামড়া কিনে গত দুই বছর লোকসান দিয়েছেন।

এদিকে পশুর চামড়ার কম দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালকেরা। উপজেলার জামিয়া আরাবিয়া পেন্নাই ঈদগাহ কওমি মাদ্রাসা ও এতিমখানার পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোস্তাক আহমেদ বলেন, এতিমখানায় এলাকাবাসীর দেওয়া চামড়াগুলো কিনতে এক ব্যবসায়ী এলে ৩৫০ টাকা দাম হাঁকা হয়। জুতসই না হওয়ায় ওই ক্রেতা চলে যান। নিজের পছন্দমতো দাম বলতেও ক্রেতা আর ফিরে আসেননি। এখন এসব চামড়া ঢাকায় নেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।