লুঙ্গি পরে পরীক্ষা দেওয়ায় তিন ছাত্রকে বহিষ্কার, ভিন্ন কথা বলছে প্রশাসন

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অনলাইন পরীক্ষা চলাকালে পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। প্রশাসন বলছে, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও নিয়ম অনুসরণ না করার কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বহিষ্কৃত তিন ছাত্র বলছেন, লুঙ্গি পরে পরীক্ষা দেওয়ার অভিযোগে তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, কোভিড পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনলাইনে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গত জুলাই মাসে। আগস্ট থেকে নিয়মিত বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষা হচ্ছে। গত সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ছিল ফুড প্রসেস অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ও ১৭তম ব্যাচের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা চলছিল। এ পরীক্ষায় পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়।

বহিষ্কৃত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ঠিক করতে বলা হয়। ক্যামেরা ওপর-নিচ করার সময় আমার লুঙ্গি স্যারের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর এ নিয়ে কথা তোলেন তাঁরা। নেটওয়ার্কেরও সমস্যা ছিল। স্যার ডাকলে আমি শুনতে পাইনি। পরে আমাকে জুম অ্যাপ থেকে বের করে দেওয়া হয়।’

আরেক ছাত্র বলেন, তিনি যেখানে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তার পেছনে জানালা থাকায় আলো আসছিল। ফলে তাঁকে দেখা যাচ্ছিল না। স্যার তাঁকে জানালা বন্ধ করতে বলেন। এ সময় স্যার তাঁর পরনে লুঙ্গি দেখতে পান। তারপর ‘ড্রেস কোড’–এর কথা তুলে তাঁকেও জুম অ্যাপ থেকে বের করে দেন। পরে স্যারকে ফোন করলে তিনি জানান, তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন তিনি বারবার ক্যামেরার বাইরে তাকাচ্ছিলেন। তখন দায়িত্বরত শিক্ষক তাঁর কক্ষের চারপাশ দেখাতে বলেন। এ সময় তাঁর পরনে লুঙ্গি দেখে তাঁকেও জুম অ্যাপস থেকে বের করে দেওয়া হয়। তিনি তখন অনুষদের ডিন সাজ্জাদ হোসেনকে ফোন করলে তিনি বলেন, বিষয়টি দেখভালের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সুপারভাইজারের। পরে সুপারভাইজারের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আর একবার ফোন করলে এক সাবজেক্ট নয়, পুরো সেমিস্টারের জন্য বহিষ্কার করা হবে।

পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে আমাকে ক্যামেরার অ্যাঙ্গেল ঠিক করতে বলা হয়। ক্যামেরা ওপর-নিচ করার সময় আমার লুঙ্গি স্যারের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর এ নিয়ে কথা তোলেন তাঁরা। নেটওয়ার্কেরও সমস্যা ছিল। স্যার ডাকলে আমি শুনতে পাইনি। পরে আমাকে জুম অ্যাপ থেকে বের করে দেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত এক শিক্ষার্থী

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক পরীক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার সময় জুমের ব্রেকআউট রুমে প্রবেশ করেন বিভাগের চেয়ারম্যান। তখন পরিদর্শক চেয়ারম্যানকে বলেন, কিছু ছেলে লুঙ্গি পরে পরীক্ষা দিচ্ছে, তিনি কী করবেন? তখন চেয়ারম্যান তাঁদের বের (রিমুভ) করে দিতে বলেন।

পরীক্ষার সুপারভাইজার ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিহাবুল আউয়াল বলেন, পরীক্ষা শুরুর আগে সাধারণত তাঁরা শিক্ষার্থীদের ক্যামেরার পজিশনসহ বিভিন্ন বিষয়গুলো ঠিক করে নেন। কিন্তু দুজন শিক্ষার্থী নির্দেশনা অমান্য করেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে তর্ক করছিলেন। নির্দেশনা অনুসরণ না করায় তাঁদের বহিষ্কার করা হয়েছে। অপর তিনজনকে পরীক্ষায় নকল করার অপরাধে বহিষ্কার করা হয়েছে।

ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডিন সাজ্জাদ হোসেন বলেন, পাঁচ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে, যা আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে জানানো হয়নি। তবে এক শিক্ষার্থী তাঁকে ফোন করেছিলেন। মৌখিকভাবে যতটুকু জেনেছেন, লুঙ্গি পরার কারণে নয়, শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হয়েছে অসদাচরণ ও নকল করার জন্য। অনলাইন পরীক্ষার নীতিমালা তিনি তৈরি করেছেন। সেখানে ‘ড্রেস কোড’ নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। তবে লুঙ্গি পরে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করাটা বেমানান। দুই-এক দিনের মধ্যে বিষয়টির সুরাহা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সাইফুর রহমান বলেন, ‘মৌখিকভাবে বিষয়টি জেনেছি। এটি খতিয়ে দেখার জন্য অনুষদের ডিনকে বলা হয়েছে। তিনি বিষয়টি দেখছেন।’