শতকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ ষড়যন্ত্র

বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে মানববন্ধন করেছেন দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ীরাপ্রথম আলো

বগুড়া শহরের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে শাশুড়ির শতকোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করেছেন দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপারমার্কেটের ব্যবসায়ীরা। আনোয়ার ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি। মার্কেটটি শহরের নওয়াববাড়ী সড়কে অবস্থিত।

আজ শনিবার বগুড়া শহরের সাতমাথায় ওই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা থেকে আনোয়ারের বিরুদ্ধে শাশুড়ির আনা অভিযোগকে পুরোটা ষড়যন্ত্র বলে দাবি করা হয়। একই সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে আনোয়ারের তিন ভায়রাকে দায়ী করা হয়।

আনোয়ার হোসেন বগুড়া জেলা বিড়িশিল্প মালিক সমিতির সভাপতি এবং জেলা দোকানমালিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব। এ ছাড়া তিনি বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য ও নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। আনোয়ার অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তাঁর শাশুড়ি দেলওয়ারা বেগম গত বৃহস্পতিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।

দেলওয়ারা বেগম বগুড়ার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী প্রয়াত শেখ সরিফ উদ্দিনের স্ত্রী। স্বামীর মৃত্যুর পর দেলওয়ারা বেগম সব ব্যবসা ও শিল্পকারখানা পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বগুড়ার চারমাথা ও শাকপালা এলাকায় অবস্থিত সরিফ সিএনজি ফিলিং স্টেশন লিমিটেড-১ ও ২ এবং দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপারমার্কেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সঙ্গে সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির অন্যতম মালিকও তিনি।

আনোয়ার হোসেন দেলওয়ারা বেগমের বড় মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানার দ্বিতীয় স্বামী। তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্তজমিন পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক।

ষড়যন্ত্রের নেপথ্যে তিন ভায়রা

মানববন্ধনে বলা হয় এই ‘ষড়যন্ত্রের’ নেপথ্যে রয়েছেন তাঁর (আনোয়ার) তিন ভায়রা মোফাজ্জল হোসেন, ফেরদৌস আলম ও আবুল হোসেন। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরে আনোয়ার হোসেন এবং তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। পারিবারিক বিরোধের সুযোগ নিয়ে আনোয়ার হোসেনের রাজনৈতিক সুনাম নষ্ট করার জন্য বিএনপি-জামায়াত নানামুখী ষড়যন্ত্র করছে। এই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে আনোয়ার হোসেনকে হয়রানি করার নানা অপতৎপরতা চলছে। এটা বন্ধ না হলে ব্যবসায়ীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন, অভিযোগকারী দেলওয়ারা বেগমের ১০০ কোটি টাকার উৎস তদন্ত করা দরকার। এই টাকা কোন হিসাব নম্বর থেকে আনোয়ার হোসেন তুলে নিয়েছেন, সেটা প্রমাণ না হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে মানহানি মামলা করা দরকার।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে মোফাজ্জল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা কোনো প্রতিহিংসা নয়, কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতাও নয়। আমার শ্বশুরবাড়ির সম্পত্তি সব মেয়ে সমান পাওয়ার কথা। কিন্তু আনোয়ার হোসেন একাই এটা ভোগ করতে চান। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এর আগেও তিনি মামলা দিয়ে আমাদের হয়রানি করেছেন।’

আরও পড়ুন

লিখিত অভিযোগ
দেলওয়ারা বেগমের অভিযোগ, তাঁর অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে তাঁর জামাতা আনোয়ার হোসেন ও বড় মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা তাঁর মালিকানাধীন সব প্রতিষ্ঠান দেখাশোনা করতেন। জামাই-মেয়ে দুজনই কাটনারপাড়ায় তাঁর বাসাতেই থাকতেন। ব্যবসার প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় জামাতা আনোয়ার নানা ধরনের কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেন। বিভিন্ন সময় লাইসেন্স করা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফাঁকা স্ট্যাম্প, এফডিআর ও ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেন আনোয়ার। এসব কথা বাইরে জানালে প্রাণে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকিও দিতেন। এভাবে ২০১৫ সালের মাঝামাঝি থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৫০ কোটি টাকার এফডিআর এবং বিভিন্ন ব্যাংকের কয়েকটি হিসাব থেকে আরও ৫০ কোটি টাকাসহ প্রায় ১০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন। গত ২১ সেপ্টেম্বর মেয়ে-জামাই দুজনই বাড়ি ছেড়ে গা ঢাকা দেওয়ার পর আত্মসাৎ করা টাকার অঙ্ক ১০০ কোটি টাকা প্রকাশ পায়। অন্য আসামিরা আনোয়ার হোসেনকে এ অর্থ আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন।

অভিযোগে আনোয়ার হোসেন ছাড়াও বাদী মেয়ে আকিলা সরিফা সুলতানা (আনোয়ারের স্ত্রী), বাদীর মালিকানাধীন সরিফ বিড়ি ফ্যাক্টরির ব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম, সরিফ সিএনজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাফিজার রহমান ও দেলওয়ারা-শেখ সরিফ উদ্দিন সুপারমার্কেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক তৌহিদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করা রয়েছে। এখনো অভিযোগটি মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়নি।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগের তদন্ত চলছে। ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সাধারণ কোনো অভিযোগ নয়। প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ ছাড়া কারও বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের মামলা রেকর্ড করা সম্ভব নয়।