বন্যাকবলিত সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কয়েকটি এলাকায় সোমবার বিকেলে বিদ্যুৎ–সংযোগ চালু করা হয়েছে। চার দিন পর শহরের আলফাত স্কয়ার, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও লম্বাহাটি এলাকায় বিদ্যুতের বাতি জ্বলে ওঠে। একইভাবে পল্লী বিদ্যুতের আওতায় থাকা চারটি উপজেলা সদরে স্বল্প পরিসরে বিদ্যুৎ চালু হয়েছে। তবে অন্য সাত উপজেলা এখনো বিদ্যুৎবিহীন।
একই সঙ্গে টানা তিন দিন বন্ধের পর সোমবার বিকেল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে আবারও যান চলাচল শুরু হয়েছে। সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কেও বাস চলাচল করছে। তবে জেলার উপজেলাগুলোর সঙ্গে এখনো সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের আওতায় ৩০ হাজার গ্রাহক আছেন। সব গ্রাহকই গত বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে বিদ্যুৎবিহীন ছিলেন। সোমবার বিকেলে মধ্য শহরের কিছু জায়গায় বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন হাসপাতালসহ অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।
পল্লী বিদ্যুতের সুনামগঞ্জের মহাব্যবস্থাপক সুজিত কুমার বিশ্বাস জানান, পল্লী বিদ্যুতের আওতায় জেলার মোট গ্রাহক ৩ লাখ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক আছে। এই মুহূর্তে তাঁদের ৩০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। বন্যার পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে অন্য গ্রাহকেরাও বিদ্যুৎ পাবেন। তবে বাকি উপজেলা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় বলে জানান তিনি।
সুনামগঞ্জে শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপক হোসেন আহমদ জানান, বন্যার কারণে গত বৃহস্পতিবার রাতেই সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক প্লাবিত হয়ে যায়। এরপর জেলা থেকে আর কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। সোমবার বিকেলে কয়েকটি বাস যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। তবে কোনো উপজেলা থেকে বাস যেতে পারেনি।
সুনামগঞ্জে দুদিন বৃষ্টি কম হওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো বাড়িঘরে ফেরার মতো অবস্থা হয়নি। রাস্তাঘাট ও বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি আছে। গত বৃহস্পতিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল সুনামগঞ্জ। এ সময়ে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক পর্যন্ত বন্ধ ছিল। বিদ্যুৎবিহীন ছিল চার দিন। দাঁড়ানোর মতো মাটি ছিল না কোথাও। শহরের রাস্তাঘাটে তিন থেকে ছয় ফুট পানি ছিল। এতে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। তলিয়ে যায় মানুষের বসতবাড়ি।
পুরো জেলা বন্যকবলিত হলেও জেলা সদর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি সবচেয়ে ভয়াবহ। সরকারি হিসাবে জেলায় প্রায় ৫০০ আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এ ছাড়া বাড়িঘর, অফিস-আদালত, হাসপাতাল যেখানেই সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই হাজার হাজার বানভাসি মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ৯০ ভাগ বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি। পানি কমলেও তাঁরা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। তবে পানি কমতে শুরু করায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু দোকানপাট খুলেছে। মানুষ বাজারসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র কিনছেন।
জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই উন্নতির দিকে। পানি কমছে। শহরের কিছু কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ দেওয়া হয়েছে। এতে মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭৮০ মেট্রিক টন চাল, নগদ ৮০ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর মানবিক সহায়তার ১০ হাজার বস্তা খাদ্যসামগ্রী এবং শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় জেলাজুড়ে ত্রাণ বিতরণ চলছে।