শিক্ষকতাকে অনেকেই অন্য পেশার মতো বাণিজ্যিকভাবে নিচ্ছেন

প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা–২০২১ উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে বক্তব্য দেন অতিথিরা। আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শিক্ষক লাউঞ্জে
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়, এটি একটি সেবামূলক কাজ। তবে বর্তমানে শিক্ষকতাকে অনেকেই অন্য পেশার মতো বাণিজ্যিকভাবে নিচ্ছেন। ফলে দেশে শিক্ষকদের মূল্যায়নের জায়গাটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষক লাউঞ্জে আয়োজিত ‘আইপিডিসি-প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২১’ শীর্ষক আঞ্চলিক সুধী সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন।

দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর একে একে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ তাঁদের প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সরওয়ার মুর্শেদ রতন বলেন, ‘শিক্ষকতা কোনো পেশা নয়, এটি একটি সেবামূলক কাজ। তবে বর্তমানে শিক্ষকতাকে অনেকেই অন্য পেশার মতো বাণিজ্যিকভাবে নিচ্ছেন। যার জন্য প্রিয় শিক্ষক বিষয়টি হারিয়ে যাচ্ছে।’

প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা ২০২১

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবু হেনা মোস্তফা জামাল বলেন, ‘শিক্ষকতা একটি মহান পেশা। শিক্ষকতার মধ্যে যে আবেগ রয়েছে, সেই আবেগের জন্যই বিদেশ ছেড়ে দেশে চলে আসি শিক্ষকতার মাধ্যমে জাতিকে সেবা প্রদানের জন্য। তবে আমাদের দেশে শিক্ষকদের সেই মূল্যায়নের জায়গাটি দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, যা আমাদের পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক আলমগীর কবির অনুষ্ঠানে তাঁর প্রিয় শিক্ষককে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন স্নাতক শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত, তখন আমার মা মারা যান। এরপর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেন। এসব কারণে পরিবারে আমার জন্য অনেক প্রতিকূল অবস্থা সৃষ্টি হয়। পড়াশোনার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমার প্রিয় শিক্ষক এস এম জাহাঙ্গীর খান লাইব্রেরিতে আমাকে ডেকে যে দিকনির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেখান থেকেই আবার ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প করি। উনার সেই নির্দেশনা আজ আমাকে শিক্ষক হিসেবে গড়ে তুলতে সাহস জুগিয়েছে। আজ প্রথম আলোর এই প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা অনুষ্ঠান থেকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি আমার প্রিয় শিক্ষককে।’

শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কাজী মনজুর কাদির বলেন, ‘আমার বাবা শিক্ষক ছিলেন। ছোটবেলায় আমরা ভাইবোনেরা মাদুরের ওপর বসে হারিকেন সামনে রেখে একসাথে পড়তে বসতাম। হারিকেনের আলোর একদিকে ছায়া পড়ত, এ নিয়ে সকলের মধ্যে একরকম প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলত ভালো জায়গায় বসার জন্য। সেই স্মৃতিগুলো এখনো আমাকে রোমন্থন করে।’

কুষ্টিয়া আবৃত্তি পরিষদের সভাপতি কবি আলম আরা জুঁই বক্তব্য দিতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘আজকের আয়োজন দেখে শৈশবের শিক্ষকদের মুখগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে। ভিডিও চিত্র দেখে চোখে পানি ধরে রাখতে পারছি না। সত্যিই সেই সব শিক্ষককে প্রথম আলো যে মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, এটা প্রশংসনীয়।’

আইপিডিসি–প্রথম আলো প্রিয় শিক্ষক সম্মাননা–২০২১ উপলক্ষে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক সুধী সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একাংশ। আজ বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ শিক্ষক লাউঞ্জে
ছবি: প্রথম আলো

প্রথম আলোর কুষ্টিয়ার নিজস্ব প্রতিবেদক তৌহিদী হাসানের সঞ্চালনায় সুধী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন কুষ্টিয়ায় অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সুধাংশু কুমার বিশ্বাস, কুষ্টিয়া সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ আনছার হোসেন, একই কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষক মনিরুজ্জামান মণ্ডল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান নুরুননাহার, অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আলী মোস্তফা, কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক আকলিমা ইরা, পরিবেশবিদ খলিলুর রহমান প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে প্রিয় শিক্ষকদের নিয়ে তৈরি দুটি তথ্যচিত্র বড় পর্দায় দেখানো হয়। এ ছাড়া প্রিয় শিক্ষক সম্মাননার মনোনয়ন জমা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। কুষ্টিয়া বন্ধুসভার সদস্যরা এই অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা করেন।