শিক্ষক ও জনবল ছাড়াই ভর্তি প্রক্রিয়া

  • প্রতিষ্ঠানটি সদর হাসপাতাল থেকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরে নির্মাণ করা হয়েছে।

  • মন্ত্রণালয়ে ২৫৮ জন শিক্ষক–কর্মচারীর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ১৯৮ জন।

ফাইল ছবি

উদ্বোধনের সাড়ে তিন বছরেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক ও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলের প্রয়োজনীয় আসবাব ও যন্ত্রাংশ এখনো আসেনি। এরই মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করেছে ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউট।

১৬ অক্টোবর থেকে ধাত্রীবিদ্যায় ২৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। জনবল বলতে আছেন শুধু একজন অধ্যক্ষ ও একজন হিসাবরক্ষক।

২০১৮ সালের ২১ এপ্রিল ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউটের উদ্বোধন করেন সাংসদ আমির হোসেন আমু। প্রতিষ্ঠানটি ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরে কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির কাছে নির্মাণ করা হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের হাতে–কলমে ব্যবহারিক শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্যসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সরকারি হাসপাতাল থেকে দেড় কিলোমিটারের মধ্যে নার্সিং ইনস্টিটিউট করার নিয়ম রয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির পাশেই ১০ শয্যাবিশিষ্ট কীর্তিপাশা স্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তবে চিকিৎসক ও নার্সবিহীন জরাজীর্ণ ওই ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

প্রতিষ্ঠানটি ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল থেকে সাড়ে ৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এতে শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউট ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালে ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে শেষ হয়। এখানে প্রায় ৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চার তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হোস্টেলসহ শিক্ষক-কর্মচারীদের তিনটি আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলে ৪ শয্যার ২৪টি ও ২ শয্যাবিশিষ্ট ১৫৫টি কক্ষ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন সৌরবিদ্যুতের প্যানেল ও জেনারেটরের ব্যবস্থা রয়েছে। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে পোদ্দার এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে।

নার্স
ফাইল ছবি

ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে ২৫৮ জন শিক্ষক–কর্মচারীর চাহিদা পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক চাওয়া হয়েছে ১৯৮ জন। বর্তমানে একজন অধ্যক্ষ ও একজন হিসাবরক্ষক দেওয়া হয়েছে। ৪ বছর মেয়াদী বিএসসি বেসিক ও পোস্ট বেসিক কোর্সে ১০০ জন শিক্ষার্থী ও বিএসসিœস্নাতকোত্তর কোর্সে ১১২ জন শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ রয়েছে। মিডওয়াইফ ও অন্যান্য কোর্সে বাকি শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সম্প্রতি পুরো দেশে নার্সিং কোর্সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মিডওয়াইফ কোর্সের ২৫ শিক্ষার্থীকে ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউটে ভর্তির অনুমোধন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাঁদের ১৬ থেকে ১৮ অক্টোবরের মধ্যে ভর্তি হতে বলা হয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের জন্য শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলের আসবাব এখনো এসে পৌঁছায়নি, দেওয়া হয়নি পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। সে ক্ষেত্রে ভর্তির পরে তাঁদের পাঠদান ও থাকার ব্যবস্থা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছে কর্তৃপক্ষ।

সম্প্রতি সরেজমিনে সদরের কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ির পাশে অবস্থিত নার্সিং ইনস্টিটিউটে দেখা যায়, একাডেমিক ভবনসহ আবাসিক ভবন এলাকায় সুনসান নিরবতা। একজন হিসাবরক্ষক ও একজন অস্থায়ী নিরাপত্তাপ্রহরী ইনস্টিটিউটের দেখাশোনা করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তির আগেই শিক্ষকসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দেওয়া উচিত ছিল। প্রতিদিন ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য ৯ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আসা–যাওয়ার পর শিক্ষার্থীরা বইয়ের পড়া কখন পড়বে?’

ঝালকাঠি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শৈলেন্দ্র নাথ মণ্ডল বলেন, ‘আমরা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছি। শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক হলের আসবাবসহ পরীক্ষাগারের প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ দেওয়ার দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের।’

ঝালকাঠি নার্সিং ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শাহিনুর বেগম প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি নতুন হওয়ায় প্রথম ব্যাচে ভর্তি হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের একটু অসুবিধা হবে। মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় জনবল ও শিক্ষকের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। আসবাবসহ অন্যান্য জিনিসপত্র শিগগির চলে আসবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গাড়িতে করে প্রতিদিন ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। আবার ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালন শেষে আবাসিক হলে ফিরিয়ে আনা হবে।