শিবপুরে দুই যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় গ্রেপ্তার আরও ২
নরসিংদীর শিবপুরের বাঘাবতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে চাদরে মোড়ানো অবস্থায় দুই যুবকের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের দৌলতকান্দি গ্রাম থেকে আজ রোববার ভোর পাঁচটার দিকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে বেলা দুইটায় নরসিংদী ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে র্যাব-১১।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন নরসিংদী রায়পুরার হাসিমপুরের কলাবাড়িয়া গ্রামের মৃত আবু সাঈদের ছেলে উমেদ আলী (৩৫) ও নরসিংদী সদর উপজেলার মাধবদী থানাধীন নওয়াপাড়ার ভগীরথপুর গ্রামের মৃত ফিরোজ মেম্বারের ছেলে মো. আকরাম হোসেন (৩৪)।
এর আগে ঘটনার দিন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোহেল মিয়া (৩২) ও তাঁর ভগ্নিপতি বিল্লাল হোসেনকে (৩০) ছিনতাই হওয়া দুটি ব্যক্তিগত গাড়িসহ তিনটি গাড়ি, পিস্তল, ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গত বৃহস্পতিবার শিবপুর উপজেলার শ্রীফুলিয়া বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন মহাসড়কের পাশের একটি ঝোপ থেকে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। তাঁরা হলেন পলাশ উপজেলার খানেপুর গ্রামের রুবেল মিয়া (২৫) ও নরসিংদী সদর উপজেলার শাহেপ্রতাব এলাকার জাহিদ হোসেন (৩০)। তাঁরা পেশায় গাড়িচালক।
র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের দেওয়া সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ঘটনায় প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১১ নরসিংদীর একটি দল রোববার ভোর পাঁচটার দিকে রায়পুরার দৌলতকান্দিতে অভিযান চালায়। এ সময় ওই জোড়া হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি উমেদ আলী ও তাঁর সহযোগী আকরাম হোসেনকে গ্রেপ্তার এবং তাঁদের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ কেজি গাঁজা ও দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়।
আরও বলা হয়, নিহত দুই যুবকের পরিচয় শনাক্তের পরপরই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্তে নামে র্যাব। পরে নানা তদন্ত ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে উমেদ ও আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিভিন্ন সূত্র থেকে র্যাব নিশ্চিত হয়, পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে গত বুধবার রাতে ব্যক্তিগত গাড়ির চালক রুবেল রেন্ট-এ-কারের আরেক চালক শাহজালালকে ফোন করে মাধবদীতে একটি ট্রিপ থাকার কথা বলেন।পরে রুবেল, শাহজালাল ও জাহিদ এই তিন ব্যক্তিগত গাড়ির চালক শাহজালালের বাসায় একত্র হন।
র্যাব জানায়, শাহজালালের বাসায় সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাঁদের বেশ কয়েকজন সহযোগী উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মাদক বিক্রয়ের টাকার ভাগাভাগি নিয়ে জাহিদ, রুবেলের সঙ্গে সোহেল, উমেদ, আকরামসহ তাঁদের সহযোগীদের বাগ্বিতণ্ডা–হাতাহাতি হয়। সোহেল, উমেদ ও তাঁর সহযোগীরা ওই দুজনের কাছ থেকে সঙ্গে থাকা দুটি ব্যক্তিগত গাড়ি ছিনিয়ে নেন।
সেই গাড়িতে করেই জাহিদ ও রুবেলকে নিয়ে শিবপুরের বরইতলা এলাকার মনির নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে যান। সেখানে মাদকের অর্থের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে উমেদ, সোহেল ও তাঁর সহযোগীরা পুনরায় এই দুজনকে মারধর করেন। একপর্যায়ে শ্বাসরোধে রুবেল ও জাহিদকে হত্যা করা হয়।
উমেদকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, যে মাদকের কারণে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে, তা আকরামের কাছে আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে আকরামকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাঁর কাছে থাকা সাড়ে ১৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়। তাঁরা সিলেট থেকে মাদক এনে নরসিংদী ও তার আশপাশে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে র্যাব-১১ নারায়ণগঞ্জের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, মূলত মাদক কারবারির টাকা লেনদেনের বিরোধে এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার উমেদ ও আকরামের বিরুদ্ধে মাধবদী, রায়পুরা ও ঢাকার বাড্ডা থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জোড়া খুনে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রেখেছে র্যাব। গ্রেপ্তার দুই আসামির বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।