শিশুদের মারামারিতে জেল খাটছেন মা, পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বাবা

দুই শিশুর ঝগড়া ও মারামারির ঘটনার জেরে করা মামলায় এক শিশুর মা এখন কারাগারে। মামলার আরেক আসামি শিশুটির বাবা আটকের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। ঘটনাটি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভূমখারা এলাকার।


মামলাটিকে হয়রানিমূলক বলে দাবি করেছেন শিশুটির স্বজনেরা।

নড়িয়া থানা ও স্থানীয় গ্রামবাসী সূত্র জানায়, নড়িয়ার ভূমখারা গ্রামের বাসিন্দা নূরজাহান বেগমের স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল চট্টগ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করেন। চার শিশুসন্তান নিয়ে তিনি গ্রামের বাড়িতে থাকেন। ৩ আগস্ট নূরজাহানের ছেলে মজনু (৯) ও মোজাম্মেলের (৮) সঙ্গে প্রতিবেশী সালাম ব্যাপারীর ছেলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল আহাদের (১৪) ঝগড়া ও মারামারি হয়। তাদের মারামারিতে আহাদ মাথায় আঘাত পায়। ওই ঘটনার জের ধরে ওই দিন আহাদের বাবা আবদুস সালাম লোকজন নিয়ে মজনু ও মোজাম্মেল, তাদের মা নূরজাহান, দুই বোন বিথী ও সাথিকে মারধর করেন। এ ঘটনা উল্লেখ করে ওই দিন রাতেই নূরজাহান বেগম নড়িয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি নথিভুক্ত করেনি।


পরে ২১ আগস্ট সালামের স্ত্রী শিউলি বেগম নড়িয়া থানায় নূরজাহান ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নূরজাহান ও তাঁর স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল শিশু আবদুল আহাদকে মাথায় ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করেন। ওই রাতেই নড়িয়া থানার পুলিশ নূরজাহানকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন তাঁকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

আজ মঙ্গলবার ওই গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, নূরজাহানের চার শিশুসন্তান আতঙ্কে ঘরে বসে থাকে। মা–বাবার জন্য কান্নাকাটি করে। ভয়ে তারা রাতে ঘুমাতে পারে না।
ওই ঝগড়ার ঘটনায় মাথায় আঘাত পাওয়া শিশু আবদুল আহাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে সে জানায়, ঈদের দুই দিন পর বাড়ির পাশের বাজারে মজনু ও মোজাম্মেলের সঙ্গে তার কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে মোজাম্মেল হাতে থাকা ফিটকিরির প্যাকেট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে তার মাথা কেটে রক্ত বের হয়। ওই ঘটনার সময় মজনু-মোজাম্মেলের মা–বাবা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।


আবদুল আহাদের সঙ্গে কথা বলার সময় তার বাবা আবদুস সালাম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। শিশুদের ঝগড়ার সময় নূরজাহান বেগম ও তাঁর স্বামী উপস্থিত ছিলেন না, এমন কথা আপনার সন্তানই বলছে; অথচ তাঁদের দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দিলেন! জানতে চাইলে আবদুস সালাম বলেন, ওরা এলাকার মধ্যে খুব খারাপ। আর ওই শিশুদের মা সন্তানদের প্রশ্রয় দেয়। এ কারণে তাঁকে মামলায় আসামি করা হয়েছে। নূরজাহানের করা মারধরের অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি তাঁদের মারধর করিনি, ঘটনাটি জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে একটু ধস্তাধস্তি হয়েছে।’

নূরজাহানের অভিযোগটি নথিভুক্ত না করে তদন্ত করছিলেন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবিদ হাসান। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নূরজাহানের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছিল। এমন অবস্থায় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ঘটনাটি মীমাংসা করে দেওয়ার কথা বলেন। এ কারণে তা আর নথিভুক্ত করা হয়নি। কিন্তু ওই ঘটনার বিপরীতে কেন মামলা হলো, আর কেন নূরজাহানকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হলো, তা বুঝতে পারছি না।’

নূরজাহানের স্বামী ইয়াছিন ছৈয়াল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, তিনি মামলার আসামি হওয়ায় ভয়ে গ্রামে যাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘আমি চট্টগ্রামে ফেরি করে কাপড় বিক্রি করি। আয় কম বলে স্ত্রী-সন্তানদের গ্রামে রাখতে হয়েছে। বাচ্চারা-বাচ্চারা ঝগড়া করেছে। আমরা বড়রা মিটিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সালাম প্রভাবশালী ও বিত্তশালী। তিনি আমার স্ত্রী-সন্তানকে মারধর করলেন, আবার হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে স্ত্রীকে কারাগারে পাঠালেন। আমি এলাকায় ছিলাম না, অথচ আমাকেও আসামি করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, নূরজাহান যে অভিযোগ করেছিলেন, তাতে মারধরের কথা উল্লেখ ছিল। আর শিউলী বেগমের করা মামলায় তাঁর ছেলের মাথায় কোপানোর অভিযোগ ছিল। এ কারণে তাঁদের মামলাটি নথিভুক্ত করে নূরজাহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন ওই ঘটনার সঙ্গে নূরজাহান জড়িত ছিলেন কি না, তা তদন্ত করে দেখা হবে। সেভাবেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।