শিশু রিহানের মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না পরিবার
ফুফুর সঙ্গে পাশের উপজেলায় যাচ্ছিল পাঁচ বছর বয়সী শিশু রিহান। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সে বাড়ি থেকে বের হয়। গ্রামের রাস্তা দিয়ে তারা হেঁটে যাচ্ছিল। এ সময় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চাপায় মারা যায় সে। শিশু রিহানের পরিবার এ মৃত্যু মেনে নিতে পারছে না। তার পরিবারে চলছে মাতম।
রিহান রাজপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার মো. জাহাঙ্গীরের ছেলে। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে রিহান পঞ্চম। ভাইদের মধ্যে সে সবার ছোট। রিহানের বাবা জাহাঙ্গীর গ্রামে কৃষিকাজ করেন।
নিহত শিশুর পরিবারের ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মাগরিবের সময় ফুফু রোশেনা বেগমের সঙ্গে রিহান বাড়ি থেকে বের হয়। রাজাপুর থেকে সিঙ্গারবিল যাওয়ার গ্রামের রাস্তা দিয়ে তাঁরা হেঁটে যাচ্ছিলেন। বাড়ি থেকে সামান্য দূরত্বে রাজাপুর বায়তুন নুর জামে মসজিদের সামনে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রিহানকে ধাক্কা দেয়। এতে রিহান মাটিতে পড়ে যায়। তখন অটোরিকশাটি রিহানের ওপর দিয়ে চলে যায়।
পরে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গিয়ে ওই অটোরিকশা ও চালক সোহাগ সূত্রধরকে আটক করে। সোহাগ পাশের বিজয়নগর উপজেলার চম্পকনগর গ্রামের বাসিন্দা। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রিহানের বাবা ঘটনাস্থলে যান। রিহানকে উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে নয়টায় গ্রামের মসজিদে জানাজা শেষে তাকে গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়।
ঘটনার পরপরই আটক অটোরিকশার চালক সোহাগ সূত্রধরের পরিবারের লোকজন রাজাপুরে আসেন। তারা আখাউড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. শাহজাহানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নিহত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ না থাকায় অটোরিকশাচালককে ছেড়ে দেন ইউপি চেয়ারম্যান।
ইউপি চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত রিহানের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলের মৃত্যু হয়েছে। ছেলে চলে গেছে। সে আর ফিরে আসবে না। অটোরিকশাচালকও গরিব মানুষ। পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় সবকিছু বিবেচনায় তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁর বক্তব্য রেকর্ড করে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোনো অনুমোদন নেই। এসব যান অবৈধ বলে জানান তিনি।
ছেলের হায়াত নেই। তাই কোনো অভিযোগ নেই। শিশু ছেলেকে এভাবে হারানোর দুঃখ তিনি কোনো দিন ভুলতে পারবেন না।
আজ দুপুরে রাজাপুর গ্রামে নিহত রিহানের বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের ভিড় লক্ষ করা গেছে। মাটির তৈরি ঘরের ভেতরে বসে বাবাসহ স্বজনেরা শিশু রিহানের বিষয়ে আলাপ করছিলেন। রিহানের বাবা মো. জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল বিকেলে পাশের বিজয়নগর উপজেলার চাউরা এলাকার বাসিন্দা তাঁর খালা সাফিয়া বেগম (৮০) মারা যান। তাঁকে দেখতে ছোট ছেলে রিহানকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বোনের বাড়ি থেকে বের হন। কিন্তু অটোরিকশার চাপায় তাঁর ছেলেট মারা যায়। তিনি বলেন, ছেলের হায়াত নেই। তাই কোনো অভিযোগ নেই। শিশু ছেলেকে এভাবে হারানোর দুঃখ তিনি কোনো দিন ভুলতে পারবেন না।
জাহাঙ্গীর আরও বলেন, ‘আমার ছেলে খুব শান্ত স্বভাবের ছিল। এলাকার সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করত ও সুন্দর করে কথা বলত। সবাই তাকে পছন্দ ও স্নেহ করত। আমার সবচেয়ে আদরের সন্তান ছিল রিহান।’
রিহানের স্বজনেরা বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচলের কোনো অনুমতি নেই। চালকেরাও দক্ষ নন। নিজের ইচ্ছামতো তাঁরা অটোরিকশা চালান। অবৈধ যান ও অদক্ষ চালকের জন্যই শিশু রিহানের মৃত্যু হয়েছে।
আখাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এখনো নিহত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।