শের-ই-বাংলা মেডিকেলের করোনা ওয়ার্ডে ৫ জনের মৃত্যু

করোনাভাইরাস
প্রতীকী ছবি

বরিশালের শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার উপসর্গ নিয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন আজ বুধবার এবং বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও বিকেলে। এ নিয়ে এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মোট ৫০৭ জনের মৃত্যু হলো। এর মধ্যে ১৪৯ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন।

হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে পটুয়াখালী সদরের কাঠপট্টির শাহজাহান হাওলাদার (৬৫) মঙ্গলবার সকালে করোনার উপসর্গ নিয়ে করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। ওই দিন বেলা তিনটায় মৃত্যু হয় তাঁর। বরগুনার বেতাগী উপজেলার খলিলুল রহমান (৬০) নামের অপর এক রোগী করোনার উপসর্গ নিয়ে গত সোমবার রাত ১০টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মারা যান।

এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন আজ বুধবার এবং বাকি তিনজনের মৃত্যু হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এ নিয়ে এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে মোট ৫০৭ জনের মৃত্যু হলো।

ঝালকাঠি সদরের নথুল্লাবাদ এলাকার আবুল হোসেন খান (৫৫) নামের আরেকজন করোনার উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত ১০টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। তিনি ওই দিন রাত সাড়ে ১১টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। চতুর্থ ব্যক্তি সুলতান আহমেদ (৭৫) মারা যান আজ সকাল সাতটার দিকে। তাঁর বাড়ি পটুয়াখালী সদরের সিঅ্যান্ডবি রোড এলাকায়। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে আজ ভোররাত চারটায় এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হন। এরপর সকাল পৌনে সাতটায় তাঁর মৃত্যু হয়। মারা যাওয়া পঞ্চম ব্যক্তি পিরোজপুরের নেছারাবাদের মজিবুর রহমান (৭৫)। তিনি করোনার উপসর্গ নিয়ে মঙ্গলবার রাত পৌনে নয়টায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় মারা যান।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, মৃত্যু হওয়া পাঁচজনের কারও করোনা ছিল কি না, তা নিশ্চিত নন। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।

মৃত্যু হওয়া পাঁচজনের কারও করোনা ছিল কি না, তা নিশ্চিত না। বিষয়টি নিশ্চিত হতে তাঁদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
মো. মনিরুজ্জামান, সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) , বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

পরিচালকের কার্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে নতুন ২৬ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে একজন করোনা পজিটিভ। এই সময়ে চিকিৎসায় সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১৭ জন। যাঁদের মধ্যে দুজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। আজ দুপুর পর্যন্ত করোনা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১১৯ জন রোগী। এর মধ্যে ৩২ জনের করোনা পজিটিভ। শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা ১৫০।

বরিশাল বিভাগে দুই সপ্তাহ ধরে করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় এই সরকারি হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের শয্যার সংকট দেখা দিতে পারে আশঙ্কায় সম্প্রতি হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবদুর রাজ্জাক বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কাছে বিকল্প আরেকটি করোনা হাসপাতাল প্রস্তুতের জন্য আবেদন করেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বুধবার পর্যন্ত এই হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৩৭ জন। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৫০৭ জনের। যার মধ্যে ১৪৯ জন করোনা পজিটিভ ছিলেন।

বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকেই এই বিভাগে করোনার সংক্রমণ ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করে। ১৩ থেকে ১৯ মার্চ এই সাত দিনে বিভাগের ছয় জেলায় করোনায় আক্রান্ত হন মাত্র ৭৭ জন। কিন্তু ২০ থেকে ২৬ মার্চ পরের সাত দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২২৮, অর্থাৎ প্রায় তিন গুণ। ১৬ মার্চ থেকে ৩ এপ্রিল এই ১৯ দিনে বিভাগে আক্রান্ত হন ১ হাজার ৯৯১ জন। আর ৪ থেকে ৭ এপ্রিল এই চার দিনে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪২৪ জনের।