‘শো শো করি পানি আসি দুম করি পার ভাঙ্গি পানিত পরে’

দুধকুমার নদের ভাঙনের শিকার একটি পরিবার। আজ শনিবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুরে
ছবি: প্রথম আলো

‘চোখের নিমিষে বসতভিটা ও গাছপালা নদে গেল। আন্ধারের মধ্যে শো শো করি পানির সত (স্রোত) আসি দুম করি পার ভাঙ্গি পানিত পরে। ভয়ে মানুষ অস্থির। ডাকাডাকি শুরু করে। কোনটা ছাড়ি কোনটা আটকায়। হাঁক চেঁচামেছি শুনি পাশের গ্রামের মানুষ ছুটি আইসে।’

নদে ভেঙে যাওয়া ভিটার শেষ অংশে খোলা আকাশের নিচে দুপুরের খাবার রান্না করতে করতে এসব কথা বলছিলেন রাবেয়া বেগম। তাঁর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরযাত্রাপুরে।

দুধকুমার নদে পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। মানুষ গাছপালা কেটে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। এলাকাগুলো হলো নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের মালিয়ানী, সর্দারটারী, কালীগঞ্জ ইউনিয়নের কুমড়িয়ারপাড়, কুমেদপুর, নামারচর, শালমারা, মৈশালপাড়া, বেরুবাড়ী ইউনিয়নের খেলারভিটা ও চররহমানের কুটি গ্রাম।

আজ শনিবার সকালে চরযাত্রাপুরের ভাঙনকবলিত এলাকা ঘুরে চারদিকে বিধ্বস্ত অবস্থা দেখা গেছে। যেখানে–সেখানে ফেলে রাখা হয়েছে ঘরের চালা। অনেকে ঘর সরাতে ও গাছ কাটতে ব্যস্ত।

রাবেয়া বেগম বলেন, ‘পাক করি খাম সে অবস্থা নাই। ঘরের চালা মানষের জমিত ফ্যালে রাখছি। নিজের জমি নাই কোটে যাম। উপায় না পায়া চালার নিচে ছাওয়া পাওয়া ধরি থাকি।’

পাশেই খড়ের ভাঙা ঘরে গরুকে খাবার দিচ্ছিলেন হালিমা বেগম। তিনি জানান, এখানে দুই পরিবারের চারখানা ঘর ছিল। একখানা ভেসে গেছে। বাকিগুলো পাশে রাখা হয়েছে। সেখানে রাতে থাকেন। গরুর খাওয়ার খড় ভেসে গেছে। মানুষের কাছ থেকে খড় এনে গরুকে খেতে দিচ্ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা কাচুয়ানী বেগম বলেন, ‘এক মেয়েসহ বাড়িতে থাকি। বৃহস্পতিবার এমন ঝড়ি (বৃষ্টি) বাতাস ডাক। চোখের নিমিষে একটা ঘরসহ জিনিসপত্র ভাসি যায়। কোনো রকমে একটা বাঁচাইছি। সড়কের পাশে পড়ি আছি।’

চরযাত্রাপুর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ঘোগাদহ ইউনিয়নের চররাউলিয়া ও রসুলপুর। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, দুধকুমার নদের স্রোত উত্তর দিক থেকে এসে ধনুকের মতো ভাঙছে। ইতিমধ্যে ২০টি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নদ প্রথম আলো চর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কাছে চলে এসেছে।

যাত্রাপুর ইউপির চেয়ারম্যান আইয়ুব আলী বলেন, হঠাৎ পানি বেড়ে ব্যাপক ভাঙনের সৃষ্টি হয়। তিনি লোকজন নিয়ে অনেক ঘর রক্ষা করেছেন। মানুষের করুণ অবস্থা।

কুড়িগ্রামের পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী ওমর ফারুক বলেন, দুধকুমার নদের পানি আকস্মিক বেড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বেশ কিছু বসতভিটা ও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলে জানানো হয়েছে।