সংক্রমণ উদ্বেগজনক, স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই

করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। সম্প্রতি খুলনার ডাকবাংলো এলাকায়।
ফাইল ছবি

সকাল সাড়ে ৯টার দিকে খুলনা নগরের গল্লামারি থেকে একটি ইজিবাইকে উঠেন সাইফুল ইসলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাইফুল। যাবেন ময়লাপোতা মোড়ে। ইজিবাইকে যাত্রী তিনিসহ আরেকজন, রয়েছেন চালকও। আজ রোববার সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টির কারণে মোটরসাইকেল নিতে পারেননি তিনি। এ কারণে ইজিবাইকে ওঠা।

ইজিবাইকটি কিছুদূর আসার পর যাত্রী হিসেবে উঠেন মধ্যবয়সী একজন। মুখে মাস্ক নেই। চারজনের সিটে তখন তিনজন হয়ে গেছে। নিরালা মোড়ে আসার পর আরও দুজনকে তুললেন চালক। ভেতরে চারজন মুখোমুখি ও সামনে চালকের পাশে একজন। নিরালা মোড় থেকে যে দুজন উঠলেন, তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক ছিল না। অস্বস্তিতে পড়লেন সাইফুল। কিন্তু কিছু করার নেই। বৃষ্টির মধ্যে যে নেমে যাবেন, সে উপায়ও নেই। অন্যদিকে নেমে গিয়ে যে অন্য ইজিবাইকে উঠবেন, সেখানেও গাদাগাদি করে যাত্রী বসে আছে।

ময়লাপোতায় নামার পর হাঁফ ছাড়লেন সাইফুল ইসলাম। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, ‘করোনা কী আর এমনি এমনি ছড়াচ্ছে! কারও মধ্যেই সচেতনতার বালাই নেই। আপনি যদি সচেতন থাকেন, তাহলে হবে কী! অন্যজনকেও তো সচেতন থাকতে হবে। জেলা প্রশাসন থেকে যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, তার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। এমন থাকলে নামে নামে লকডাউন দিয়ে কোনো কাজ হবে না।’

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও মনে করছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণেই খুলনায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে। বারবার সতর্ক করে বিধিনিষেধ আরোপ করা হলেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি।

রোববার সকাল থেকেই ভারী বৃষ্টির কারণে নগরে মানুষের চলাচল ছিল তুলনামূলক কম। অল্প কিছু ইজিবাইক, থ্রি-হুইলার ও রিকশা চলাচল করতে দেখা গেছে। তবে অধিকাংশই ছিল যাত্রীতে ভরা। বেশির ভাগ চালকের মুখে ছিল না মাস্ক।

সচেতনতা বাড়াতে খুলনার শিববাড়ী মোড়ে চার বেহারার পালকি ভাস্কর্যে বেহারার মুখে মাস্ক পরিয়ে রাখা হয়েছে।
ফাইল ছবি

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বৃষ্টি খানিকটা কমে আসে। তখন নগরের ডাকবাংলা এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মানুষের ভিড়। নারী-পুরুষ সবাই কেনাকাটায় ব্যস্ত। মঙ্গলবার থেকে সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হচ্ছে শুনেই যে যাঁর মতো করে কেনাকাটা করতে এসেছেন। অধিকাংশ বিক্রেতার মুখে মাস্ক নেই। মাস্ক পরা থাকলেও তা থুতনিতে নামানো।

মাস্ক টেনে থুতনিতে নামানো এক বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে তিনি তক্ষুনি মাস্কটি ওপরে টেনে তুলেন। পরক্ষণেই বলেন, বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে দম বন্ধ হয়ে আসে।
খুলনার এমন চিত্র এখন প্রতিটি এলাকায়। মানুষের মধ্যে সচেতনতার কোনো বালাই নেই। অনেকেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও মাস্ক পরছেন প্রশাসনের ভয়ে। আর সন্ধ্যার পর বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে মানুষের ঢল দেখে বোঝার উপায় নেই যে খুলনায় করোনার সংক্রমণ বাড়ছে।

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্যানুযায়ী, শনিবার খুলনায় ৭৯৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২২৩ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার প্রায় ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন সাতজন। আর খুলনা বিভাগে মারা গেছেন ২৮ জন।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার একমাত্র কারণ, স্বাস্থ্যবিধি না মানা। সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য সচেতন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে ও হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণার পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরও মানুষের মধ্যে সচেতনতা আসেনি। এ কারণেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। এ লকডাউনের উদ্দেশ্য হলো মানুষের চলাচল বন্ধ করা।

করোনা হাসপাতালে রোগীর চাপ

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত খুলনা করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে রোগীর চাপ বেড়েই চলেছে। ১৩০ শয্যার হাসপাতালে বর্তমানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকছে ১৫০ জনের বেশি। পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় হাসপাতালের মেঝেসহ যেখানে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে, সেখানেই রোগী রাখা হচ্ছে। আজ ওই হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিল ১৫৯ জন।

এর মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ছিলেন ৯৮ জন ও উপসর্গ নিয়ে রোগী ভর্তি ছিলেন ২৩ জন। এ ছাড়া এইচডিইউতে ২০ জন ও আইসিইউতে ১৮ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। ধারণক্ষমতার চেয়েও এত বেশি রোগী সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সরা।

সদর হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু

আজ সকাল থেকে খুলনা সদর (জেনারেল) হাসপাতালে নতুন করে করোনা রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত সেখানে পাঁচজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
ওই হাসপাতলে ৭০ জন রোগী ভর্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাসপাতালে কোনো আইসিইউ সুবিধা না থাকলেও অক্সিজেন প্ল্যান্ট থাকায় ভর্তি হওয়া সব রোগীই সেখানে অক্সিজেনের সুবিধা পাবেন।

ওই হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক কাজী আবু রাশেদ বলেন, হাসপাতালটি এখন পুরোপুরি করোনা রোগীদের চিকিৎসায় প্রস্তুত। সেই হিসাবে চিকিৎসক ও নার্স নিয়োগ করা হয়েছে। প্রথম দিনই পাঁচজন রোগী ভর্তি হয়েছেন।