সংসার চালাতে ৪-৫ ঘণ্টা বেশি রিকশা চালাচ্ছেন ফজর আলী, তারপরও টানাটানি

বেশি সময় রিকশা চালাতে গিয়ে শরীরের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধই করছেন ফজর আলী। আজ শুক্রবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের হাসপাতাল সড়কে
ছবি: প্রথম আলো

‘মা-বাপ ও বউরে কইছি খাবার কমাইতে। গ্রামে তারা আগের চেয়ে খাওন অনেক কমাইছে। নিজেও শহরে কম খাই, যাতে গ্রামের বেশি খরচ দিতাম পারি। কারণ, দুটি ছোট বাইচ্চা আছে। আগে ১০ ঘণ্টা রিকশা চালাতাম। অহন ১৪-১৫ ঘণ্টা রিকশা চালাই। খাইয়া তো বাঁচত অইব।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা রিকশাচালক মোহাম্মদ ফজর আলীর। তাই তিনি রিকশা চালানোর সময় বাড়িয়েছেন। তবুও ছয় সদস্যের সংসারের খরচ মেটাতে পারছেন না। তাই চেষ্টা করছেন কম খেয়ে সংসারের খরচ কমাতে।

মোহাম্মদ ফজর আলী ময়মনসিংহের ইশ্বরগঞ্জ উপজেলার শিমরাইল গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে। পরিবারের সদস্যরা শিমরাইল গ্রামে থাকলেও ফজর আলী দীর্ঘ চার বছর ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলী এলাকায় থাকছেন। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তৃতীয় আবদুল কাদেরের গ্রামের বাড়িতে বাবা আবদুল কাদের, মা আঞ্জুরা বেগম, স্ত্রী জোহরা বেগম ও দুই সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান সুবর্ণা আক্তার (৭) মাদ্রাসায় পড়ে। হৃদয় মিয়া নামের ছোট ছেলের বয়স চার বছর। তাঁদের সবার দায়িত্ব ফজরের ওপর।

কোমরে ব্যথা হইয়া গেছে। কিন্তু বাঁচতে তো অইব। গ্রামে বউ, পুলা-মাইয়্যা ও মা-বাপ আছে। হেরারে টেহা না পাঠাইলে খাইব কী।
ফজর আলী, রিকশাচালক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কাউতলী এলাকায় থাকা-খাওয়া বাবদ ফজর আলীকে ১২০ টাকা খরচ দিতে হয়। ভাড়ায় রিকশা চালানোয় মালিককে জমা দিতে হয় ৩৫০ টাকা। তিনি বলেন, আগে সকাল ৮টায় বের হয়ে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৮-৯ ঘণ্টা রিকশা চালাতেন। তখন দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা রোজগার হতো। রিকশাভাড়া বাবদ মালিককে ৩০০ টাকা এবং প্রতিদিন খাবার ও থাকা বাবদ ১০০ টাকা দিতেন। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা হাতে থাকত। এখন বিকেল ছয়টার পরিবর্তে রাত প্রায় সাড়ে ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালান। জিনিসপত্রের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সংসারের খরচও বাড়ছে। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।

বেশি সময় রিকশা চালাতে গিয়ে শরীরের সঙ্গে একপ্রকার যুদ্ধই করছেন উল্লেখ করে ফজর আলী বলেন, ‘মালিক রিকশার ভাড়া বাড়াইছে। খাওন (খাবার) ও থাকনের (থাকার) খরচও বাড়ছে। তার ওপর বিভিন্ন জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। গ্রামের সংসারের খরচ ও মাইয়্যাডার পড়ার খরচও বাড়ছে। তাই অহন আগের তুলনায় আরও ৪-৫ ঘণ্টা বেশি রিকশা চালাই। এইড্যা ছাড়া কোনো উফায় (উপায়) নাই।’
ফজর আলী জানান, আগে ১২০ টাকা দিয়ে এক লিটার তেল কিনতেন। এখন ২০০ টাকার বেশি দিয়ে এক লিটার তেল কিনতে হয়। দাম ডবল হয়ে গেছে। ২০ টাকা কেজির পেঁয়াজ ৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়। সব কিছুর দাম বাড়ছে। রিকশা চালিয়ে যা আয় হয়, তাতে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। কোনো উপায় না পেয়ে ৪-৫ ঘণ্টা বেশি রিকশা চালান তিনি।

ফজর আলী বলেন, ‘কোমরে ব্যথা হইয়া গেছে। কিন্তু বাঁচতে তো অইব। গ্রামে বউ, পুলা-মাইয়্যা ও মা-বাপ আছে। হেরারে টেহা না পাঠাইলে খাইব কী।’