সংস্কারের অভাবে হুমকিতে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ

ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙে লোকালয় পানি প্রবেশ করছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টায় বরগুনা সদর উপজেলার বড়ইতলা এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর নদীর ভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় জেলার ২৯ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় বাঁধের দুর্বল অংশগুলো দিয়ে ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার সময় লোকালয় প্লাবিত হয়ে বসতঘর ও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পায়রা, বিষখালী ও বলেশ্বর তীরের বাসিন্দারা বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের সময় জেলায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সব অংশের সংস্কার হয়নি। এর মধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় এসে পড়েছে। বর্ষা মৌসুম এলেই বাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। এতে বাঁধ টেকসই হয় না। শুকনা মৌসুমে নির্মাণ করলে বাঁধ টেকসই হয়। তাই তাঁরা ওই সময় বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ২২টি পোল্ডারে ৮০৫ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে ২৯ কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। বরগুনা সদর উপজেলায় ১৫টি স্থানে ৬ দশমিক ৩২০ কিলোমিটার, আমতলীতে ৫ দশমিক ২২০ কিলোমিটার, তালতলীতে ১ দশমিক ৯৫০ কিলোমিটার, পাথরঘাটায় ৮ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার, বামনা উপজেলার ৬ দশমিক ৫১৫ কিলোমিটার বাঁধ হুমকির মুখে আছে।

পাউবো বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী কাইছার আলম প্রথম আলোকে বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস ও অমাবস্যার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদীতে অস্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১৫ -১৮ ফুটের অধিক পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। গত বছর ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে জেলার ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু অর্থ বরাদ্দ না থাকার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের সব অংশ সংস্কার করা হয়নি।

কাইছার আলম আরও বলেন, ‘আগস্ট মাসে উচ্চ জোয়ারের কারণে বরগুনা জেলার প্রায় ৯ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাঁধ পুনর্নির্মাণ ও প্রতিরক্ষার জন্য ইতিমধ্যে ১০০ কিলোমিটারের ১টি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প পাস হলেই অর্থ বরাদ্দ পাব। বরাদ্দ পাওয়ার পর দ্রুতগতিতে কাজ শুরু করব।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার বড়ইতলা এলাকার রিং বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। এতে ওই এলাকার ঘরবাড়ি, ফসলি জমি এবং পুকুর ভেসে গেছে।

পাথরঘাটা উপজেলার বলেশ্বর নদের তীরের পদ্মা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ওই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা গত সেপ্টেম্বর মাসে অস্বাভাবিক জোয়ারে ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এ ভাঙা বাঁধ রক্ষার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে মাটির বস্তা ফেলে রাখা হয়েছে।

সদর উপজেলার ফুলঝুরি গ্রামের বাসিন্দা মো. রাসেল বলেন, ‘ঝড়-জলোচ্ছ্বাসের সময় কর্তৃপক্ষের বাঁধ নির্মাণে টনক নড়ে। ঝড় থেমে গেলে তাদের আর খবর থাকে না। বর্ষা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। এ কারণে বাঁধ টেকসই হয় না। শুকনা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণ করা হলে বাঁধ আরও টেকসই হবে। আমরা শুকনা মৌসুমে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছি।’

বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার শেষে পানিতে ভাসতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব, এলাকার ভাঙা বাঁধগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন।

বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। প্রতিদিন দুইবার জোয়ার শেষে পানিতে ভাসতে হয়। যত দ্রুত সম্ভব, এলাকার ভাঙা বাঁধগুলো সংস্কার করা প্রয়োজন। ঘূর্ণিঝড় সিডর প্রথম বাঁধে আঘাত হানে। এই এলাকার জীবন-জীবিকা স্বাভাবিক রাখতে হলে বাঁধের ভাঙনকবলিত এলাকা দ্রুত সংস্কার করতে হবে।

তালতলীর তেঁতুলবাড়িয়া শাহাদত হোসেন বলেন, ‘আমরা ভাঙা-গড়া নিয়ে বেঁচে আছি। ঘূর্ণিঝড় সিডরে এই এলাকার বাঁধ নদীতে বিলীনের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। প্রতিবছর ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে আমাদের বাড়িঘর, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’