সকালে যানবাহনে নগরে ঢুকলেও বিকেলে ফিরতে গিয়ে ভোগান্তি

পুলিশের তৎপরতায় কোনো ধরনের যানবাহন না পেয়ে মানুষ গন্তব্যে ফিরছেন হেঁটে। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজশাহী নগরের তালাইমারী এলাকায়।
ছবি: প্রথম আলো

অসুস্থ এক স্বজনকে নিয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন পুঠিয়া উপজেলার বাসিন্দা দুই নারী। সকালে স্বজনকে হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। বিকেলের দিকে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা। সকালে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা করে এলেও বিকেলে ফেরার পথে যানবাহন পাচ্ছিলেন না। পুলিশ সদস্যদের কাছে বললেও লাভ হয়নি। পুলিশের চেকপোস্টের আশপাশে অটোরিকশাও ভিড়ছিল না। দুজনের হাতে দুটি ব্যাগ নিয়ে তাঁরা বাড়ির দিকে যাচ্ছিলেন হেঁটেই।

এই দুই নারীর মতো সকালে শহরে ঢুকেছিলেন পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের আবদুল মালেক। তিনি সকালে নির্মাণকাজে শহরে ভটভটিতে করে এসেছিলেন। বিকেলে কাজ শেষে কোনো গাড়িই পাচ্ছিলেন না। চেকপোস্ট পার হয়ে গাড়ি পেলে উঠবেন। নইলে গ্রামের ভেতর দিয়ে সোজাসুজি হেঁটে চলে যাবেন।

নগরের তালাইমারী এলাকায় বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এসব দৃশ্য চোখে পড়েছে। এই দুই নারী ও শ্রমিক আবদুল মালেকের মতো অনেক মানুষ হেঁটেই শহর থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে যাচ্ছিলেন।

তালাইমারী মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজে নিজে নানা রকম ‘বকাঝকা’ করছিলেন মো. জামাল (৪০)। তিনি একটি বাস কোম্পানির কর্মচারী। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ থাকায় মাইক্রোবাসে বিভিন্ন জায়গায় যাত্রী তুলে পাঠান। তাঁদের মাইক্রোবাসটি পুলিশ আটকিয়ে মামলা দিয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পুলিশের চেকপোস্টে কড়াকড়ি করলে সব সময়ই করা উচিত। মাঝেমধ্যে কড়াকড়ি করে কোনো লাভ আছে? সকালে শহরে মানুষ ঢুকেছে গাড়িতে করে। তখন এদের ঠেকানো যেত। এখন তারা বাড়ি ফেরার সময় গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। মামলা দিচ্ছে।

নগরের এই পয়েন্টে মানুষকে শুধু হেঁটেই চলাচল করতে দেখা গেছে। শহরের ভেতর থেকে অটোরিকশায় লোকজন বের হলেও ভেতরে কোনো যানবাহন ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। একজন রিকশাচালক চেকপোস্টের আগেই ভয়ে দুজন যাত্রীকে নামিয়ে দিলেন। বললেন, তাঁদের অনেকের রিকশার পাম্প ছেড়ে দিয়েছে। তিনিও শুনেছেন। যাত্রীদের জোরাজুরিতে এসেছিলেন। পুলিশ দেখে আগেই নামিয়ে দিলেন। রিকশার ওই দুই যাত্রী হেঁটেই নগরের দিকে রওনা হলেন।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, তাঁরা জরুরি সেবার গাড়ি নগরে ঢুকতে দিচ্ছেন। এ ছাড়া যাঁদের রোগী ভর্তি বা রোগী নিয়ে মেডিকেলে যাওয়া প্রয়োজন, তাঁদের ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য কাউকে শহরের দিকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে পুলিশের উপস্থিতি না পেলেই গাড়িগুলো ঢোকার চেষ্টা করে।

আজ শুক্রবার রাজশাহী নগরে চলছে ‘সর্বাত্মক লকডাউনের’ ১৫তম দিন। ১১ জুন বিকেল পাঁচটা থেকে প্রথম দফার লকডাউন শেষ হয় ১৭ জুন মধ্যরাতে। নগরের করোনা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি না হওয়াতে এই লকডাউন বাড়িয়ে ২৪ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত করা হয়। পরিস্থিতি দুই সপ্তাহেও উন্নতি না হওয়ায় ৩০ জুন পর্যন্ত চলছে লকডাউন। লকডাউনের শুরুর কয়েক দিন পুলিশের তৎপরতায় নগরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। নগরে অটোরিকশা ও মানুষের আনাগোনা কম ছিল। কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই নগরের পরিস্থিতি একটু ‘অন্য রকম’ হয়ে যায়। অটোরিকশা ও মানুষের পরিমাণ বেড়ে যায়।

তবে লকডাউনের দুই সপ্তাহের মাথায় আজ শুক্রবার ছুটির দিনে পুলিশের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ছুটির দিন থাকলেও নগরে অটোরিকশা ও মানুষের আনাগোনা থাকে। কিন্তু আজ শহরের পথঘাট একটু বেশিই ফাঁকা দেখা গেছে।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার গোলাম রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, শুক্রবার থেকে নগরের প্রতিটি প্রবেশপথে কড়াকড়ি করা হয়েছে। পুলিশ কোনো যানবাহন ঢুকতে দেয়নি। এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে পুলিশ।