সচ্ছল পরিবার পেল গৃহহীনের ৭ ঘর

বেলালের নিজের একটি পাকা বাড়ি আছে। তাঁর গোয়ালঘরে পাঁচটি গরু রয়েছে, যেগুলোর দাম ছয় লাখ টাকার বেশি।

  • বদলগাছিতে ২০২১-২২ অর্থবছরে মুজিব বর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য তৃতীয় পর্যায়ে ৪৬টি ঘর নির্মাণে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।

  • সাদিশপুরের ৪০টি ঘরের মধ্যে ২৮টি নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে।

নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার সাদিশপুর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন পাকা বাড়ির মালিক বেলাল হোসেন
প্রথম আলো

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দুর্যোগ সহনীয় ঘর বরাদ্দ পাওয়ার কথা দরিদ্র ও গৃহহীন পরিবারগুলোর। কিন্তু নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার এক গ্রামে সচ্ছল একটি পরিবারের সদস্যরা সাতটি ঘর পেয়েছেন। অথচ একই গ্রামে গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা চেয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাননি।

অভিযোগ আছে, এভাবে উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম করা হয়েছে। এ ছাড়া ঘরগুলোর ছাউনিতে নিম্নমানের টিন ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে ঝড়-বৃষ্টি হলে সবার ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। তবে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দাবি, ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দে কোনো অনিয়ম হয়নি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদলগাছি উপজেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য তৃতীয় পর্যায়ে ৪৬টি ঘর নির্মাণে কাবিটা প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে আধাইপুর ইউনিয়নের সাদিশপুরে ৪০টি, একই ইউনিয়নের জগন্নাথপুরে ৩টি ও বালুভরায় ৩টি ঘর নির্মাণের কথা। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকা।

যাঁদের ঘরবাড়ি সব আছে, তাঁরা সরকারের ঘর পেয়েছেন, অথচ আমরা সত্যিকারের গৃহহীন হয়েও ঘর পাইনি।
হাফিজুল ইসলাম, সাদিশপুর গ্রামের বাসিন্দা

জানতে চাইলে বদলগাছি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ময়নুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগ দিয়েছি। কারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন, সেটি ইউএনও স্যার ভালো বলতে পারবেন।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছ, সাদিশপুরে নির্মিত ঘরগুলোর মধ্যে একটি সচ্ছল পরিবারের একাধিক ব্যক্তি ও তাঁদের স্বজনদের নামে সাতটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা হলেন জিল্লুর রহমান, তাঁর ছেলে বেলাল হোসেন ওরফে বাবু, বেলালের দ্বিতীয় স্ত্রী মেরিনা ও ছেলে পলাশ, জিল্লুর রহমানের জামাতা শহিদুল, শহিদুলের ছেলে জহিরুল, জহিরুলের স্ত্রী রেবেকা পারভিন।

বেলাল হোসেন (৪৫) সাদিশপুর আশ্রয়ণ প্রকল্প সমিতির সভাপতি। তিনি আধাইপুর ইউনিয়নের সাদিশপুর গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বেলাল নিজের পাকা বাড়িতে বসবাস করছেন। তাঁর গোয়ালঘরে পাঁচটি গরু রয়েছে, যেগুলোর দাম ছয় লাখ টাকার বেশি। একটি কলের লাঙলও রয়েছে। তিনি ১০-২০ বিঘা জমিতে ফসল আবাদ করেন। তাঁর পাকা বাড়ি। সে বাড়ির পাশেই পেয়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরটি।

সাদিশপুরের ৪০টি ঘরের মধ্যে ২৮টি নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২টি ঘর নির্মাণের কাজ এখনো চলছে। ঘর পাওয়া মিনা বেগম ও তাঁর স্বামী আজিজ বলেন, ‘ঝড়-বৃষ্টিতে আমাদের সবার ঘরের চালা দিয়ে বৃষ্টির পানি পড়ে। এ কারণে আমরা সবাই পলিথিন কিনে রেখেছি। ঝড়-বৃষ্টির সময় পলিথিন দিয়ে আসবাব ঢেকে রাখি।’

সম্প্রতি বেলাল হোসেনের বাড়িতে তাঁর ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী পলি আরার সঙ্গে কথা হয়। পলি আরা বলেন, ‘আমার স্বামী অনেক কষ্ট করে পাকা বাড়িটি নির্মাণ করেছেন। আর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে দুটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছি। এর মধ্যে একটি বড় ছেলে পলাশের নামে। পলাশ ঘরটিতে থাকছে। আমার ও আমার স্বামীর নামে বরাদ্দ দেওয়া ঘরটির নির্মাণকাজ চলছে।’

পাকা বাড়ি থাকার পরও নিজের ও অবিবাহিত ছেলের নামে সরকারি ঘর বরাদ্দ পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে বেলাল হোসেন বলেন, ‘সরকার দিয়েছে, তাই পেয়েছি। এতে আপনাদের সমস্যা হচ্ছে কেন?’

একই গ্রামে ঘর না থাকায় উঠানে চৌকি ফেলে বাস করছেন হাফিজুল ইসলাম ও তাঁর পরিবারের লোকজনেরা। তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর চেয়ে পাননি বলে জানিয়েছেন। হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁদের ঘরবাড়ি সব আছে, তাঁরা সরকারের ঘর পেয়েছেন, অথচ আমরা সত্যিকারের গৃহহীন হয়েও ঘর পাইনি।’

ঘর বরাদ্দে কোনো অনিয়ম হয়নি বলে দাবি করেছেন বদলগাছি উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, বেলাল হোসেনের দুই স্ত্রী। তাঁরা আলাদা থাকেন। তাঁর বড় ছেলে বিবাহযোগ্য। এ কারণে ওই পরিবারে দুটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।