সদরঘাটে নেই স্বাস্থ্যবিধি, শুরুতেই লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী পারাপার

লঞ্চ চলাচল শুরু হওয়ায় সদরঘাটে বেড়েছে মানুষের ভিড়। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানতে অনেকের মাঝে অনীহা ছিল। আজ সোমবার বিকেলে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেছবি: দীপু মালাকার

টানা ৪৮ দিন বন্ধ থাকার পর আজ সোমবার সারা দেশে যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল শুরু করেছে। করোনার সংক্রমণ রোধে লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী বহনে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি উপেক্ষা করে ঢাকা নদীবন্দর থেকে ছেড়ে গেছে বেশির ভাগ লঞ্চ। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সদরঘাটে আসা লঞ্চগুলোতেও গাদাগাদি করে যাত্রী চলাচল করতে দেখা গেছে।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানার আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য সতর্ক করেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)।

আজ সোমবার বেলা দুইটার দিকে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চাঁদপুর থেকে ছেড়ে আসা বেশির ভাগ লঞ্চে যাত্রীদের ভিড়। লঞ্চের ডেকে বসা বেশির ভাগ যাত্রীর মুখে নেই কোনো মাস্ক। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে একে অপরের গা ঘেঁষে লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসে আছেন। সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অনেকগুলো লঞ্চ। কিছু কিছু লঞ্চের সামনে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা রাখলেও অনেক যাত্রী সেটি ব্যবহার করছেন না।

দেওয়ানবাড়ি ঘাটগামী কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, লঞ্চে প্রবেশকালে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডেকে বসার কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রীরা সেটি মানছেন না।
ঝালকাঠিগামী সুন্দরবন-১ লঞ্চের কর্মচারী সারোয়ার হোসেন বলেন, যাত্রীরা যাতে গাদাগাদি করে ডেকে না বসেন, সে জন্য তাঁদের সতর্ক করা হচ্ছে। এ ছাড়া যাত্রীদের মাস্ক পরার জন্য তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।

লঞ্চের ডেকে গাদাগাদি করে বসা মানুষের মধ্যে মাস্ক পড়তেও অনীহা দেখা যায়। আজ সোমবার বিকেল তিনটার দিকে সদরঘাট টার্মিনালে কর্ণফুলী-৪ লঞ্চে
ছবি: প্রথম আলো

অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সংস্থার সদস্য ও গাজী লঞ্চের পরিচালক বাবু গাজী বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে লঞ্চ চলাচল করছে। লঞ্চে প্রবেশকালে যাত্রীদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরার কথা বলা হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ডেকে বসার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যাত্রী ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য প্রতিটি লঞ্চে স্যানিটাইজেশন করা হচ্ছে।

ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে বেলা দুইটা পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল থেকে সদরঘাট টার্মিনালে লঞ্চে এসেছে ১৩টি এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছেড়ে গেছে ৩৭টি লঞ্চ।

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, লঞ্চে যাত্রী বেশি হওয়ার কারণে ইলিশা রুটের এমভি দোয়েল পাখি লঞ্চ নির্ধারিত সময়ের এক ঘণ্টা আগে ঢাকা নদীবন্দর ত্যাগ করানো হয়েছে। লঞ্চমালিক, নৌ পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্মকর্তারা সমন্বয় করে প্রতিটি লঞ্চে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি নজরদারি করছেন। যেসব লঞ্চ স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করবে, সেসব লঞ্চের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস নিয়ে সতর্কতা

ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানার আশঙ্কায় ঢাকা নদীবন্দরসহ সারা দেশে চলাচলকারী যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে থাকার জন্য সতর্ক করেছে বিআইডব্লিউটিএ।

ঢাকা নদীবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে ঢাকা নদীবন্দর থেকে দক্ষিণাঞ্চলে চলাচলকারী সব যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হচ্ছে। এ সময় যাত্রীবাহী নৌযানগুলোকে নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণ করার জন্য লঞ্চমালিক ও কর্মচারীদের সতর্ক করা হয়েছে। এ ছাড়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের সংকেত মেনে নৌযান চলাচল করতে বলা হয়েছে।

নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস আঘাত হানার আশঙ্কায় প্রতিটি লঞ্চের মালিক, মাস্টার ও চালককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে নৌযানের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।