শেরপুরের নালিতাবাড়ী
সফল নারী উদ্যোক্তা থেকে জনপ্রতিনিধি
তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলার নন্নী ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি জয়লাভ করেন।
নবম শ্রেণিতে লেখাপড়া করা অবস্থায় বিয়ে হয়ে যায় মোছা. ইছমত আরার (২৯)। স্বামী-সংসার নিয়ে ভালোই কাটছিল তাঁর। একদিন বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে পরচুলা তৈরির কারখানার সন্ধান পান তিনি। সেখানে ভর্তি হয়ে সেই কাজ রপ্ত করেন। পরে এলাকায় এসে একেক করে অনেক নারীকে সেই কাজ শেখান। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে এক হাজার নারী এ কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
ইছমত আরার বাড়ি শেরপুরের নালিতাবাড়ীর নন্নী ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া গ্রামে। স্বামী আবু তালেব (৩৯) স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে পিয়নের চাকরি করেন। ঘরে তাঁদের দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
ইছমত আরার প্রচেষ্টায় গ্রামের নারীদের দারিদ্র্য ঘুচলেও, তাঁদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ ছিল না। তাই অসহায় নারীদের অধিকার নিশ্চিত করতে ইছমত আরাকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়ে দেন নারীরা। প্রথমবারেই তিনি বাজিমাত করেন। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে উপজেলার নন্নী ইউপির ১, ২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী আসনে তিনি জয়লাভ করেন। তিনি অসহায় নারীদের স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি নারীদের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
সম্প্রতি ইছমত আরার বাড়িতে গিয়ে নানা বিষয়ে নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প শোনান। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে তাঁর বিয়ে হয়। তখন স্বামী আর সংসার নিয়ে শুধু ভাবতেন। ২০১৩ সালে রাজধানীর উত্তরায় বড় বোন মোরশেদা খাতুনের বাড়িতে বেড়াতে যান তিনি। একদিন বোনের কাছে পরচুলা বানানোর গল্প শোনেন। কয়েক দিন পর ভগ্নিপতির সঙ্গে উত্তরার দেওয়ানবাড়ি এলাকায় হিয়ার-ক্যাপ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে বেড়াতে যান। সেখানে মেয়েদের কাজ করতে দেখে মনে মনে কাজ শেখার ইচ্ছা জাগে। বাড়িতে ফিরে বোনের কাছে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। বোন প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ শেখার ব্যবস্থা করে দেন। এতে স্বামীরও অনুমতি মেলে।
ইছমত আরার এর পরের গল্প এগিয়ে যাওয়ার। তিনি বলতে থাকেন, ‘এক সপ্তাহের মধ্যে কাজ রপ্ত করে ফেলি। সেখানে ছয় মাস কাজ করি। পরে প্রতিষ্ঠানটির মালিকের সঙ্গে কথা বলে নিজের এলাকায় ফিরে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করি। মালিক সম্মতি দেন। এলাকায় এসে বাড়িতে কয়েকজন নারীকে কাজ শেখাই। আস্তে আস্তে এলাকার নারীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হতে থাকে। প্রথম তিনটি টেবিলে সাত-আটজন নারীকে নিয়ে কাজ শুরু করি। পরে আরও নারী কাজ শিখতে বাড়িতে চলে আসতেন।’
এখন উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের যাত্রাকোনা, বন্ধধরা, আমলাতলী, টিলাপাড়া, কালীবাড়ি, রাজনগর, বটতলী, কলেরপাড়, মধ্য পূর্ব পাড়া ও নন্নী পশ্চিম পাড়া গ্রামে ১০ কেন্দ্রের মাধ্যমে এক হাজার নারী কাজ করছেন। এ ছাড়া ১০টি স্থানে আলাদা ঘরভাড়া, টেবিল তৈরিসহ ক্যাপের জন্য চুল, সুই, চক ও পিন সরবরাহ করতে হয়। তাঁর মাধ্যমে প্রতি মাসে ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৮০০ পরচুলার ক্যাপ তৈরি করে রাজধানীতে পাঠানো হয়। শ্রমিকেরা আকারভেদে একেকটি ক্যাপের জন্য ৫৫০ থেকে ৭৫০ টাকা করে পান। একজন নারী শ্রমিক মাসে ১০ থেকে ১২টি ক্যাপ তৈরি করতে পারেন।
সদ্য বিদায়ী উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা সাজেদা আরফিন বলেন, ইছমত আরা ২০১৮ সালে উপজেলা পর্যায়ে জয়িতা নির্বাচিত হন। ওই বছরই জেলার শ্রেষ্ঠ জয়িতা হিসেবে ময়মনসিংহ বিভাগে প্রতিযোগিতায় অংশ নেন।