‘সবকিছুর দাম বাড়ে, রুজি তো বাড়ে না’

মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে তালের শাঁস বিক্রি করছেন হারুন মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

ভ্যানে করে তালের শাঁস বিক্রি করছিলেন হারুন মিয়া। একটি তালের শাঁসের দাম ৩০ টাকা। ভ্যান ঘিরে ক্রেতাদের ভিড়। তবে দাম শুনে ক্রেতাদের অনেকের মুখ বেজার। সবকিছুর দাম বেড়েছে, তাই তালের শাঁসও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে বলে জানালেন বিক্রেতা হারুন মিয়া।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মৌলভীপাড়ায় হারুন মিয়া একটি ভাড়া বাসায় থাকেন। তবে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামে। বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্ত্রীসহ তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে তাঁর সংসার। মৌসুমি ব্যবসা হিসেবে তালের শাঁস বিক্রি বেছে নিয়েছেন তিনি। অন্য সময় তিনি আম, চালতা, জাম ও কাঁচকলার ভর্তা বিক্রি করেন। এতে যা আয় হয়, তাতে ছয়জনের সংসার চলত।

তবে সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় একা সংসারের খরচ জোগাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তাই হারুনের স্ত্রী নাজমা বেগম কয়েক মাস ধরে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেছেন।

শহরের গভর্নমেন্ট মডেল গার্লস স্কুলের বাইরে হারুর মিয়ার সঙ্গে আলাপ জমল। তিনি জানান, শহরের একটি আড়ত থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০০ তালের শাঁস ১ হাজার ২০০ টাকায় কিনেছেন। ভ্যানভাড়া দৈনিক ১০০ টাকা। নিজেই ভ্যান চালিয়ে ঘুরে ঘুরে শাঁস বিক্রি করেন। আকারে ছোট তালের শাঁস ১০ টাকা ও বড় তালের শাঁস ৩০ টাকা করে বিক্রি করছেন।

সম্প্রতি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় একা সংসারের খরচ জোগাতে হারুন হিমশিম খাচ্ছেন। তাই হারুনের স্ত্রী নাজমা বেগম কয়েক মাস ধরে অন্যের বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ শুরু করেছেন।

হারুন মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি করতে পারি। খরচ বাদ দিয়ে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো হাতে থাকে। এতে বাসাভাড়া, সংসার ও দুই মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে কষ্ট হয়। কারণ, এখন তো সবকিছুর দাম বাড়ছে। আমার একজনের আয়ে তো সংসার চলে না। বাসাভাড়া তিন হাজার টাকা। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার জন্য আরও আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা লাগে। সংসারের আরও খরচ তো আছে।’

বাজারে তেল ও মসলার দাম বেড়েছে। তাই তালের মৌসুম শেষে আম ও চালতা বাদ দিয়ে শুধু কলাভর্তা বিক্রি করবেন বলে ভাবছেন হারুন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমি সিজনাল ব্যবসা করি। আম, চালতা, জাম ও কাঁচকলার বর্তা (ভর্তা) বিক্রি করি। তাল শেষে অইলে শুধু বর্তা বিক্রি শুরু করুম। তেল ও মসলার দাম বাড়ছে, তাই আচার বেচা বাদ দিতে অইব।’

হারুন বলেন, ‘আগে এক কেজি তেল কিনতাম। কিন্তু দাম বাড়ায় অহন আধা কেজি কিনি। এইডা দিয়াই বউরে কাজ করতে কইছি। সবকিছুই কিনা কমাইয়া লাইছি। কারণ, বাঁচতে অইব। মাছ-মাংস খাইতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু পুলা-মাইয়ারে খাওয়াইতে ইচ্ছা করে। কিন্তু এসব ক্যামনে কিনুম! এসব কিনবার সাহস অই না। কোনোমতে বাঁইচ্যা আছি। সবকিছুর দাম বাড়ে, কিন্তু রুজি তো বাড়ে না।’