শিক্ষা, অর্থসহ সবদিকেই এগিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থী

খান আহমেদ শুভ (বাঁয়ে) ও জহিরুল ইসলাম

জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের আগামী রোববার অনুষ্ঠেয় উপনির্বাচনে পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী খান আহমেদ শুভ শিক্ষা, অর্থ, বিলাসবহুল গাড়ি, এমনকি ব্যাংকঋণেও সবার ওপরে। তবে তাঁর কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই। স্থাবর সম্পত্তি বেশি জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলামের।

খান আহমেদ শুভ ও জহিরুল ইসলাম—দুজনই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তবে অপর তিন প্রার্থীর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির গোলাম নওজব চৌধুরী এসএসসি পাস, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রূপা রায় চৌধুরী সাক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম স্বশিক্ষিত।

নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেওয়া হলফনামায় প্রার্থীরা নিজেরাই এসব তথ্য দিয়েছেন। তবে এ তথ্য প্রচারের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি নির্বাচন কমিশন। আওয়ামী লীগের সাংসদ একাব্বর হোসেন গত ১৬ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

এ উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক খান আহমেদ শুভ। হলফনামায় তিনি পেশায় বেসরকারি বালু মাটি সরবরাহকারী বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর নিজের হাতে নগদ ২ লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৫ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর নিজের নামে ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৩১০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮০ টাকা জমা রয়েছে। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে ছয় লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে। তাঁর ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩৭০ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক সুদ থেকে আয় ১৪ হাজার ৩৫২ টাকা। খান আহমেদের নিজের ৩০ ভরি এবং স্ত্রীর ১৫ ভরি সোনা রয়েছে। তাঁর নিজের কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই।

তবে তিনি ৮১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ এবং ৩০ হাজার টাকা মূল্যের মুঠোফোন সেট ব্যবহার করেন। তাঁর স্ত্রী ব্যবহার করেন ২০ হাজার টাকা মূল্যের মুঠোফোন। তাঁর নামে অতীতে কোনো মামলা হয়নি। বর্তমানেও কোনো মামলা নেই। পূবালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখায় ১৭ লাখ ৯০ হাজার ২৩৮ টাকা ঋণ রয়েছে।
খান আহমেদ শুভ এই আসনের সাবেক সাংসদ এবং টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খানের ছেলে।

জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম ১৫০ শতাংশ কৃষিজমির মালিক বলে উল্লেখ করেছেন। কৃষি খাত থেকে বছরে তাঁর ১ লাখ টাকা এবং বাড়ি, দোকান, অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ভাড়া পান বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তাঁর নগদ ৫ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে গাড়ি বিক্রির ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা রয়েছে। এ ছাড়া ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সোনা, ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাব রয়েছে।

ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী গোলাম নওজব চৌধুরী শুধু অতীতে একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। তবে বর্তমানে কোনো মামলা নেই। তাঁর পেশা কৃষি ও জোতদারি। কৃষি খাত থেকে তাঁর বছরে ৬০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়। তাঁর নিজের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা এবং ব্যাংকে নিজ নামে দুই হাজার টাকা ও স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা রয়েছে। তাঁর ১০ ভরি সোনা, ৩০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাব রয়েছে। তিনি পৈতৃক সূত্রে ৪২ শতাংশ জমি পেয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচতলা ভিত্তিসহ ২ হাজার ১২০ বর্গফুটের নির্মাণাধীন ও একটি টিনশেড ঘর রয়েছে।

একমাত্র নারী প্রার্থী বাংলাদেশ কংগ্রেসের রূপা রায় চৌধুরী তাঁর পেশা কৃষি ও গৃহিণী বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর নামে কোনো মামলা নেই। কৃষি খাতে তাঁর ২৫ হাজার টাকা বাৎসরিক আয়। তাঁর নিজের ২০ হাজার টাকা নগদ ও ব্যাংকে নিজ নামে ১ হাজার টাকা রয়েছে। এ ছাড়া স্বামীর নগদ পাঁচ হাজার টাকা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর স্বামীর নামে ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি আছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম পেশায় ব্যবসায়ী। এই খাতে তাঁর বাৎসরিক আয় ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তাঁর নগদ তিন লাখ টাকা এবং তাঁর ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নগদ দুই লাখ টাকা রয়েছে। এ ছাড়া ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, ৭০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাব রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর স্ত্রীর ৫০ তোলা সোনা রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

মির্জাপুর পৌর এলাকার বাসিন্দা স্বপন তরফদার বলেন, এ তথ্যগুলো প্রচার হলে সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীর যোগ্যতা সর্ম্পকে সহজেই জানতে পারতেন। এতে তাঁদের ভোটদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হতো।

টাঙ্গাইলের সরকারি এম এম আলী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচনের প্রার্থীদের তথ্য হলফনামা আকারে নেওয়ার বিধান চালু করা হয়েছিল, যাতে ভোটাররা সহজেই প্রার্থী সর্ম্পকে স্বচ্ছ ধারণা নিতে পারেন। কিন্তু এই হলফনামায় প্রার্থীদের দেওয়া তথ্য প্রচার না করায় এটা কোনো কাজেই আসছে না। নির্বাচনে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

টাঙ্গাইল জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল ইসলাম জানান, প্রার্থীদের হলফনামা ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে। আগ্রহী ব্যক্তিরা সেখান থেকে তথ্যগুলো দেখে নিতে পারবেন।