সব আসামি খালাস,জানে না বাদীপক্ষ

২০১৯ সালের এপ্রিলে আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়।

ধর্ষণ
প্রতীকী ছবি

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক স্কুলছাত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় দুই বছর আগে আদালতের রায় হয়েছে। এ রায়ে সব আসামি খালাস পান। তবে ওই রায়ের খবর জানে না বাদীপক্ষ। হত্যার বিচার দাবিতে ওই ছাত্রীর নামে গঠিত মঞ্চের নেতারাও রায়ের বিষয়টি জানেন না।

শরীয়তপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি হযরত আলী বলেন, মামলার বাদী ছিলেন ওই ছাত্রীর বাবা। তিনি ২০১৮ সালের জুলাইয়ে মারা গেছেন। মৃত্যুর আগে তিনি আসামিদের সঙ্গে মীমাংসা করেছিলেন। পরে সাক্ষীরা আদালতে আসামিদের শনাক্ত করেননি। এ কারণে সব আসামি খালাস পেয়েছেন। এখন চাইলে কিশোরীর স্বজনেরা উচ্চ আদালতে আপিল করতে পারবেন।

২০১৫ সালের ১১ মার্চ স্কুলছাত্রীকে দল বেঁধে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। এ ঘটনার পর বিচারের দাবিতে ২০১৫ সালে জাজিরা উপজেলা সদরে তার নামে একটি মঞ্চ গড়ে তোলেন স্থানীয় লোকজন। সংগঠনটি অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে এখনো সোচ্চার আছে। ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার মানববন্ধন ও সমাবেশ করা হয়।

ওই মঞ্চের সমন্বয়ক পলাশ খান বলেন, ‘এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় নিভৃতে হয়ে গেল, আসামিরা খালাস পেল। কিন্তু কিছুই জানলাম না। বিষয়টি বিস্ময়কর। আমরা হতবাক। কোন ছায়াশক্তি তাকে হত্যা করেছে? কার কাছে জবাব চাইব?’

মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১১ মার্চ স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রীটি নিখোঁজ হয়। ১৩ মার্চ বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় তার বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে জাজিরা থানায় মামলা করেন। তিন মাস পর তিনি শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ১০ জনকে আসামি করে পুনরায় মামলা করেন। ২০১৭ সালের ১৪ জুন আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। এতে মাসুদ ব্যাপারী, ওয়াসিম তালুকদার, জুয়েল ঢালী, রুবেল তালুকদার ও রাজন পাঠান নামের পাঁচজনকে আসামি করা হয়।

২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল শরীয়তপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবদুস সালাম আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে ওই পাঁচ আসামিকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়। রায়ে উল্লেখ করা হয় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।

স্কুলছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে আসামিরা চাপ সৃষ্টি করেছিল। ভয়ে ছাত্রীর দুই ভাই এলাকা ছাড়েন। ছোট বোনের পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। ছাত্রীর বাবা মারা যান ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই। মামলার কার্যক্রম থেকে পিছিয়ে যায় ছাত্রীর পরিবার। তাঁরা আর মামলাটির খোঁজ রাখেননি।

এ সম্পর্কে জানতে গত বুধবার আসামি মাসুদ ব্যাপারী ও রুবেল তালুকদারের বাড়ি গেলে তাঁরা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলেননি। একপর্যায়ে তাঁরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা তাঁদের নির্দোষ দাবি করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাদীপক্ষের এক আইনজীবী বলেন, সিআইডির যে কর্মকর্তা অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন, তাঁর সাক্ষ্যও নেওয়া হয়নি। আসামিদের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও নেওয়া হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের উদাসীনতার কারণে বিচারিক পর্যায়ে এসে মামলাটি দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে আসামিরা খালাস পেয়েছেন।

স্কুলছাত্রীর মা বলেন, ‘স্বামীর মৃত্যুর পর নানা চাপে মামলাটির খোঁজ রাখতে পারিনি। রাষ্ট্রের কাছে নিরাপত্তা ও সহযোগিতা পেলে এখন ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে চাই।’