সভা ডেকে উপজেলা আ.লীগের সভাপতি ও সম্পাদককে বহিষ্কার করলেন কাদের মির্জা

আবদুল কাদের মির্জা
ফাইল ছবি

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরীকে বহিষ্কার করেছেন সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা। বৃহস্পতিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডেকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

তবে এ বিষয়ে খিজির হায়াত খান ও নুর নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেছেন, কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই। তিনি এ ধরনের কোনো সভা আহ্বান করতে পারেন না। তাঁর সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অবৈধ। তাঁরা তাঁদের পদেই আছেন। কাদের মির্জার সিদ্ধান্তে কারও বিভ্রান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীও এ কথা বলেছেন।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানার জন্য আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেননি। তাই বৈঠক আহ্বান এবং সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদ থেকে অপসারণ বিষয়ে তাঁর (কাদের মির্জা) বক্তব্য জানা যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল তিনটার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ওয়ার্কিং কমিটির সভা ডাকেন আবদুল কাদের মির্জা। নির্ধারিত সময়ের কিছুক্ষণ পরই বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী। ওই সভা পরিচালনা করেন যুগ্ম সম্পাদক মো. ইউনুছ।

দলীয় সূত্র জানায়, সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান ও সাধারণ সম্পাদক নুর নবী চৌধুরী অনুপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অপসারণ করে তাঁর স্থলে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করা হয় ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরীকে। ওই সভায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হয় মো. ইউনুছকে।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান প্রথম আলোকে বলেন, দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকের কোনো চিঠি তিনি পাননি। তবে শুনেছেন, কাদের মির্জা ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডেকে তাঁকে এবং সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে নতুন দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছেন। এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তাঁর (কাদের মির্জা) নেই। কারণ, তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পদেই নেই।

খিজির হায়াত খান আরও বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, কাদের মির্জার সিদ্ধান্ত অবৈধ। তাঁরা তাঁদের পদেই আছেন। শুধু তা–ই নয়, কাদের মির্জা গত কয়েক দিনের মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসব পরিবর্তন করেছেন, সেগুলোও অবৈধ। পূর্বে যাঁরা যে যে পদে ছিলেন, তাঁরা ওই পদেই থাকবেন।

একই বিষয়ে জানতে চাইলে নুর নবী চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, কাদের মির্জা দলের কে? তাঁকে উপজেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকার ক্ষমতা কে দিয়েছে? তাঁরা সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দলের দায়িত্ব পেয়েছেন। কেউ ইচ্ছা করলেই বাদ দিতে পারবেন না। কাদের মির্জার ডাকা ওই বৈঠকে তাঁর অনুগত হাতেগোনা কিছু নেতা ছাড়া বেশির ভাগ সদস্য অনুপস্থিত ছিলেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

কাদের মির্জার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। জেলা থেকে তাঁর (কাদের মির্জা) নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হবে।
এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী, সভাপতি, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ

তবে কাদের মির্জার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কাদের মির্জা যা করেছেন, তা বৈধ। কেউ যদি কাজ না করেন, তাহলে তাঁকে সরিয়ে জ্যেষ্ঠ যিনি তাঁকে দায়িত্ব দেওয়া যায়। তিনি জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন।

ইস্কান্দার হায়দার চৌধুরী আরও বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের যদি এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা না থাকে, তাহলে এর আগে জেলা আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে কীভাবে সেলিম ভাইকে (এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী) দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি করেছিল? আবার ওবায়দুল কাদের সাহেব কীভাবে কাউন্সিল ছাড়া একরাম চৌধুরীকে জেলা কিমিটির সাধারণ সম্পাদক ও খায়রুল আনম চৌধুরীকে জেলা সভাপতি ঘোষণা করেছিল?’

উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব পরিবর্তনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরী বৃহস্পতিবার রাত প্রথম আলোকে বলেন, কাদের মির্জার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো ক্ষমতা নেই। জেলা থেকে তাঁর (কাদের মির্জা) নেওয়া সব সিদ্ধান্ত বাতিল করে দেওয়া হবে।

এদিকে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের অনুমোদন ব্যতীত সংগঠনের কোনো শাখার (ইউনিট, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌর, থানা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর) কমিটি বিলুপ্ত না করার নির্দেশ দেওয়া হয়।