সম্পাদকের সমর্থনে ৮ বিদ্রোহী

পাবনার সুজানগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। ১০ ইউপিতে মোট ‘বিদ্রোহী’ ২০ জন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

পাবনার সুজানগর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীদের পাশাপাশি গতকাল বুধবার আওয়ামী লীগের ২০ বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতীক বরাদ্দ পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আট ইউনিয়নেই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমানের অনুসারীরা ‘বিদ্রোহী’ হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের সঙ্গে খোদ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব এ অভিযোগ তোলেন। তাঁদের দাবি, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থনেই বিদ্রোহীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। এতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও উপজেলাব্যাপী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে শাহিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেছেন, দল যাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে, তিনি তাঁর পক্ষেই কাজ করছেন। কোনো বিদ্রোহীর পক্ষ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিদ্রোহীরা কেউ তাঁর অনুসারীও নন। যাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে আছেন, তাঁরাই তাঁর অনুসারী।

দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১১ নভেম্বর উপজেলার ১০ ইউপিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। উপজেলার ১০ ইউনিয়নে মোট ৪৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে নয়জন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে আছেন বিএনপির এক নেতা। ২০ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের পাঁচজন দলীয় প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আরও পাঁচজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলীয় প্রার্থীদের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২০ ‘বিদ্রোহী’র মধ্যে ১২ জনই বিচ্ছিন্নভাবে নির্বাচন করছেন। বাকি আটজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর রহমানের অনুসারী। তাঁদের মধ্যে আছেন তাঁতিবন্ধে আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাজ্জাক, দুলাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান, আহম্মদপুরে ইউনিয়নে যুবলীগের মাহবুবুর রহমান, রানীনগরে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক টুটুল কাজী, সাগরকান্দিতে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তৈয়ব আলী, হাটখালীতে আজাহার আলী শেখ, মানিকহাটে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্বাস মল্লিক ও ভায়নায় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ওমর ফারুক।

অন্যদিকে নাজিরগঞ্জ ও সাতবাড়িয়া ইউনিয়নে সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকেরা দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় তিনি (শাহিনুর রহমান) এই দুই ইউনিয়নে কোনো বিদ্রোহীকে সমর্থন দেননি।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহাব বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থীদের অধিকাংশই সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী। তাঁর ইন্ধনেই দলীয় প্রার্থীদের বিপক্ষে বিদ্রোহীরা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।

সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী হিসেবে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের মধ্যে কথা হয় দুলাই ইউনিয়নের বিদ্রোহী প্রার্থী সাইদুর রহমানের সঙ্গে। বলেন, তিনি কারও প্ররোচনা বা সমর্থনে নির্বাচনে অংশ নেননি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। তাঁর বাবা দুবার চেয়ারম্যান ছিলেন। পুরোনো হিসাব-নিকাশ থেকেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।

দল থেকে পদত্যাগ

এদিকে আমাদের প্রতিনিধি, কুড়িগ্রাম-এর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নাম কেন্দ্রে না পাঠানোয় এক আওয়ামী লীগ নেতা পদত্যাগ করেছেন। শাহজামাল সরকার নামের এই নেতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

গত মঙ্গলবার কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাছে শাহজামাল তাঁর পদত্যাগপত্র জমা দেন। পরে গতকাল বুধবার তিনি প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শাহজামাল বলেন, ২০ থেকে ২১ বছর ধরে তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও তাঁর নাম কেন্দ্রে পাঠানো হয়নি। এবারও তাঁর নাম না পাঠানোয় পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন।