সরকারি তিন কর্মকর্তা ও ছয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা

দুর্নীতি
প্রতীকী ছবি

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচির সোয়া আট কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ বিশ্বাস বাবুলের করা এ মামলায় উপজেলার তিনজন সরকারি কর্মকর্তা এবং ছয়টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটি করেন প্রিয়তোষ বিশ্বাস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন প্রিয়তোষের আইনজীবী মোজাক্কিরুল ইসলাম। ধোবাউড়ার সাতটি ইউনিয়নের মধ্যে গামারীতলা বাদে বাকি ছয় ইউপির চেয়ারম্যান এ মামলার আসামি।

প্রিয়তোষ বিশ্বাসের অভিযোগ, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ধোবাউড়া উপজেলায় অতিদরিদ্রদের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পের কোনো কাজ না করেই টাকা তুলে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা এ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করেন। দুটি অভিযোগের তদন্তেই কোনো অনিয়ম বা অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এরপর তিনি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও), উপসহকারী প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকৌশলী এবং ছয় ইউপির চেয়ারম্যানকে আসামি করে মামলাটি করেন।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কর্মসূচি প্রথম পর্যায়ে ৬০টি প্রকল্পের নামে ২ কোটি ৪৩ লাখ ১২ হাজার টাকা এবং একই অর্থবছরে দ্বিতীয় পর্যায়ে সমপরিমাণ টাকা আসে। এ প্রকল্পের দুটি পর্যায়ে কোনো কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ করা হয়।

একই অর্থবছরে কাবিটার ১০টি প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৩৮ টাকা ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯টি প্রকল্পের ২৮ লাখ ৭১ হাজার ৫৩১ টাকা এবং তৃতীয় পর্যায়ে ১১টি প্রকল্পের ৫৮ লাখ ৬৩ হাজার ৫৫৭ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। এ রকম মোট ১৮টি অভিযোগে মোট ৮ কোটি ২৫ লাখ ৫২ হাজার টাকা আত্মসাতের কথা বলা হয়েছে।
প্রিয়তোষ বিশ্বাস বলেন, মন্ত্রণালয় ও ইউএনওর দুটি তদন্ত স্বচ্ছ হয়নি বলে তাঁর মনে হয়েছে। কাজ না করে টাকা আত্মসাতের বিষয়টি তাঁর কাছে স্পষ্ট। যে কারণে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের পরামর্শে আদালতে মামলা করেছেন।

তবে মামলার তদন্তের বিষয়ে আজ সোমবার পর্যন্ত দুদক কোনো নির্দেশনা পায়নি। দুদকের ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনো নির্দেশ পাইনি। তবে আদালত যদি এমন কোনো নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তাহলে অবশ্যই আমাদের কাছে আসবে।’

উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান ফজলুল হক বলেন, প্রিয়তোষ বিশ্বাস ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন। নির্বাচনে যাঁরা তাঁর পক্ষে ছিলেন না, সেসব চেয়ারম্যানের নামেই তিনি মামলা করেছেন বলে শুনেছেন। তাঁদের কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।

ইউএনও রাফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের কাছে করা অভিযোগ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে অভিযোগের তদন্ত করা হয়েছে। কাজ না করে টাকা আত্মসাতের কোনো প্রমাণ মেলেনি।’