সরকার ও দল আন্তরিক না হলে নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়

বরিশালে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপে অতিথিরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে নগরের একটি হোটেলের মিলনায়তনে
ছবি: প্রথম আলো

সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো আন্তরিক না হলে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। একই সঙ্গে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জনসম্পৃক্ততা না থাকলে সে উন্নয়ন জনগণের যেমন উপকারে আসে না, তেমনি আর্থিক অপচয়, দুর্নীতি রোধ করাও অসম্ভব।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বরিশাল নগরের একটি হোটেল মিলনায়তনে ‘জাতীয় উন্নয়নে অঙ্গীকার: শিক্ষা, শোভন কর্মসংস্থান, জেন্ডার সমতা’ শীর্ষক সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি), সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও জাতিসংঘ ডেমোক্রেসি ফান্ড (ইউএনডিইএফ) যৌথভাবে এ সংলাপের আয়োজন করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় শুরু হয়ে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত এ সংলাপ চলে।

সংলাপে প্রধান অতিথি ছিলেন বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনের সাংসদ ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। এতে সভাপতিত্ব করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিডিপির সংলাপ ও যোগাযোগ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক অভ্র ভট্টাচার্য।

সংলাপের সূচনা বক্তব্যে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সুষম উন্নয়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করা একান্ত জরুরি। ভোটে বিজয়ী হলে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করবে, এমনটাই বলা হয়। নির্বাচনী ইশতেহারের কথা বলে ভোট চাওয়া হয়। তাই ইশতেহার হচ্ছে নাগরিকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর একধরনের চুক্তি।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জনগণের সমর্থন আদায়ের জন্য নির্বাচনী ইশতেহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। নাগরিকেরা ইশতেহার দেখে বিভিন্ন দলের পক্ষ নেয়। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকালে দেওয়া তাদের অঙ্গীকার পূরণ করছে কি না, তা নাগরিদের জানা উচিত। কিন্তু ভোটের পর নাগরিকেরাও ইশতেহারের কথা ভুলে যান। অতীতে জনগণ সোচ্চার না হলেও আগামী দিনে নাগরিকদের ইশতেহারের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।

সংলাপে বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব ও দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে ইশতেহার যথাযথভাবে পূরণ হয় না। এখনো রাজনীতিতে নারীর প্রতি গণতান্ত্রিক চর্চা অনুপস্থিত। বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতে চলেছে, কিন্তু নারীদের পেছনে রেখে দেশ উন্নত হতে পারে না। নির্বাচন আসলে যোগ্য-দক্ষ নারী প্রার্থীদের সুযোগ দেওয়া হয় না। বরং অর্থ ও পেশিশক্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয় বলেও কয়েক বক্তা অভিযোগ তোলেন।

সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাবেক সাংসদ টিপু সুলতান, সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বরিশাল জেলা সভাপতি শাহ সাজেদা, জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি রাবেয়া খাতুন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুস্মিতা রায়, বরিশাল জেলা সুজন সভাপতি অধ্যাপক গাজি জাহিদ হোসেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, করোনায় অনেক দেশ মুখ থুবড়ে পড়লেও বাংলাদেশ করোনা ব্যবস্থাপনায় উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। পদ্মা সেতু, পায়রা বন্দর, পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রসহ দক্ষিণের উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। ভালো ব্যবস্থাপনার কারণে করোনাকালে দেশে দুস্থ মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে জাহিদ ফারুক আরও বলেন, লিঙ্গসমতায় বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় পঞ্চম। এ ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে শিক্ষার গুণগত মান পরিবর্তন করে কারিগরি শিক্ষাকে সমৃদ্ধ করতে হবে। দেশের প্রযুক্তি খাত এখন উন্নত। সরকারের দোষত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মধ্যে দুর্নীতিগ্রস্ত লোকজন আছে। কিন্তু আমি দুর্নীতিবাজ নই, দুর্নীতিবাজ ও সন্ত্রাসকে প্রশ্রয়ও দিই না।’

আলোচনায় অংশ নেন বরিশাল জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি নজরুল হক, জেলা জাসদের সভাপতি আবদুল হাই মাহবুব, নারী উদ্যোক্তা হাসিনা বেগম, দলিত সম্প্রদায়ের নেতা উত্তম কুমার ভক্ত, বেসরকারি উদ্যোক্তা জহিরুল ইসলাম, সুজন বরগুনা জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কাদের, ঝালকাঠির নারী উদ্যোক্তা নাজমা বেগম, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা তাজুল ইসলাম চৌধুরী, মাইনরিটি রাইটস ফোরাম নেতা স্বপন কুমার ব্যাপারী, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রুকাইয়া বিনতে নাসিম ও সানজিদ আলম, কলেজশিক্ষক শাহিদা আক্তার, সাবেক অধ্যক্ষ মোতালেব হোসেন প্রমুখ।

সংলাপে বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, গণমাধ্যমকর্মী, রাজনীতিক, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।