সর্বস্ব বিক্রি করে বিদেশ গিয়ে কাজ মিলছে না, দালালদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন

প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত এবং দালাল চক্রের হোতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন। আজ সোমবার বগুড়া শহরের সাতমাথায়
ছবি: সোয়েল রানা

লোভনীয় চাকরির কথা বলে বিদেশে স্বল্পমেয়াদি ভিসায় লোক পাঠিয়ে অন্তত ২৫ জনের কাছ থেকে কোটি টাকা অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কাজ না পেয়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ায় এক-দেড় মাসের মাথায় কেউ কেউ দেশে ফিরেছেন। আবার কাজ না পেয়ে কেউ কেউ বিদেশে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বিদেশে আটকে পড়া ব্যক্তিদের কাজের নিশ্চয়তা, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া অর্থ ফেরত এবং দালাল চক্রের হোতার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বগুড়া শহরে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সোমবার বেলা ১১টায় শহরের সাতমাথায় প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা এই মানববন্ধন ও সমাবেশ করেন।

ভুক্তভোগী এক ব্যক্তির স্বজন বাদী হয়ে থানায় মামলা করায় পুলিশ ইতিমধ্যেই দালাল চক্রের হোতা বগুড়া সদরের গোকুল দক্ষিণপাড়া এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।

সমাবেশে বক্তব্য দেন দুবাইয়ে আটকে পড়া তরুণ জামিউল ইসলামের বাবা দেলোয়ার হোসেন, সৌদি আরবে আটকে পড়া বগুড়া সদরের তেলিহারা গ্রামের সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক সাইফুল ইসলামের আত্মীয় শাহনেওয়াজ শাওন, বগুড়া জেলা বাসদের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম, সিপিবি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা কমিটির সভাপতি সাইফুজ্জামান টুটুল, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বগুড়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ন ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের জেলা কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা কমিটির সভাপতি দিলরুবা নুরী, সৌদি আরব থেকে ফেরত আসা প্রতারিত জালাল উদ্দিন প্রমুখ।

প্রতারিত ব্যক্তিদের অভিযোগ, গ্রেপ্তার দালাল রফিকুল ইসলাম প্রায় দেড় যুগ সৌদি আরবে ছিলেন। প্রবাস থেকে ফিরে তিনি বিদেশে লোক পাঠানোর জন্য আদম ব্যবসায় নামেন। এ জন্য কয়েকজন মিলে একটি দালাল চক্র গড়ে তোলেন। এই চক্রে রয়েছেন রফিকুল ইসলামের স্ত্রী স্বপ্না বেগম, ঢাকার ফরহাদ হোসেন, আবু সাঈদ, সুমন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জুয়েলসহ আরও কয়েকজন। তাঁরা বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির এজেন্ট পরিচয় দিয়ে বিদেশে পাঠানোর নামে প্রায় ২৫ জনের কাছ থেকে এক কোটি টাকার ওপরে অর্থ নেন।

শাহনেওয়াজ শাওন অভিযোগ করেন, তাঁর শ্বশুর ভাগ্য বদলানোর স্বপ্ন নিয়ে অটোরিকশা বিক্রি ছাড়াও ধারদেনা করে প্রায় চার লাখ টাকা তুলে দেন দালাল রফিকুল ইসলামের হাতে। ৫ মার্চ তিনি সৌদি আরবে পৌঁছান। সেখানে পৌঁছার পর তাঁর হাতে কোম্পানির ভিসা ও চাকরির নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ভিসা হাতে পাওয়ার পর দেখেন দুই মাস মেয়াদি সাপ্লায়ার ভিসা দেওয়া হয়েছে। এতে বেতনের অর্ধেকই পাবে সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি সৌদি আরবে কাজ না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাঁর ভিসার মেয়াদও শেষের দিকে। নতুন করে ভিসা করতে গেলে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় হবে। তিনি দেশে ফিরে আসতে চাইলেও বিমানভাড়া এবং দালালের হাতে তুলে দেওয়া টাকার নিশ্চয়তা নেই। বাধ্য হয়ে তিনি মামলা করেছেন।

সাতমাথায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, দালাল চক্রের মূল হোতা রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই চক্রের অন্য সদস্যরা হুমকি–ধমকি দিয়ে চলেছেন। সমাবেশ থেকে প্রতারক চক্রের সব সদস্যকে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করা হয়।