সাঁকো ভেঙে সড়ক নির্মাণ

সড়কটি এলাকার মানুষের চলাচলের জন্য সুবিধা বয়ে আনলেও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঈশ্বরগঞ্জের কাঁচামাটিয়া নদীর ওপর মাটি ফেলে সড়ক তৈরি করেছেন গ্রামবাসী। সম্প্রতি মধুপুর-উঁচাখিলা সড়কের ঘাট এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নদীটির নাম কাঁচামাটিয়া। পশ্চিম পারের অঞ্চলটি চরাঞ্চল এবং পূর্ব পারের অঞ্চলটি বীরাঞ্চল নামে পরিচিত। এলাকা দুটির মধ্যে যোগাযোগের একমাত্র উপায় ছিল বাঁশের সাঁকো। এতে ভোগান্তির শেষ ছিল না স্থানীয় বাসিন্দাদের। তাঁরা যেন ভোগান্তির ঘানি আর টানতে পারছিলেন না। এলাকাবাসী নিজ উদ্যোগে সেই সাঁকোর জায়গায় মাটি ভরাট করে নির্মাণ করেছেন কাঁচা সড়ক। সড়কটি চলাচলের জন্য সুবিধা বয়ে আনলেও নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ঘটনাটি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের রাজীবপুর ইউনিয়নের। ২০০১ সাল থেকে প্রতিটি নির্বাচনে ওই এলাকায় সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু ২২ বছরেও কেউ কথা রাখেননি। সম্প্রতি রাজীবপুর ইউনিয়নের কুলিয়ার চর সাঁকো ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নদীতে মাটি ফেলে দুই পাড়ে যাতায়াত করার জন্য কাঁচা সড়ক তৈরি করা হয়েছে। নদীতে পানিপ্রবাহের জন্য সড়কের মাঝের অংশে তিনটি পাকা নল (পাইপ) বসানো হয়েছে। তিনটি পাইপ দিয়ে পানিপ্রবাহ কতটুকু স্বাভাবিক রাখা যাবে, তা নিয়ে এখনই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

তবে সাঁকোর জায়গায় রাস্তা তৈরি করায় মানুষের চলাচলে অনেক সুবিধা হয়েছে বলে দাবি করেন গ্রাম দুটির কয়েকজন বাসিন্দা। কুলিয়ার চরের ষাটোর্ধ্ব আবুল কাশেম বলেন, ‘আমরা তো যুগের পর যুগ ভোগান্তি সহ্য করেছি। এক বাঁশের সাঁকোর ওপর দিয়ে চলাচল করেছি। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে গিয়ে কী যে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। এখন কাঁচা সড়ক হলেও আমরা সহজে যাতায়াত করতে পারছি।’ আরেক বাসিন্দা মতিউর রহমান বলেন, ‘সরকার নানা খাতে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছে। কিন্তু আমাদের জন্য কেউ কিছু করেননি। ২২টি বছর কেটে গেলেও কেউ কথা রাখেননি। এখন রাস্তা নিজেরাই করে নিয়েছি।’

রাজীবপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন এ কে এম মোদাব্বিরুল ইসলাম। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সর্বশেষ নির্বাচনে পরাজিত হন তিনি। মোদাব্বিরুল বলেন, নির্বাচনের আগে তিনি দুই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কথা দিয়েছিলেন, সাঁকোর জায়গায় একটি সহজ যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে দেবেন। নির্বাচনে পরাজিত হলেও নিজের টাকা খরচ করে সড়ক তৈরি করে দিয়েছেন। গ্রামবাসীও মাটি কাটায় অংশ নিয়েছেন। নদীর ওপর মাটি ফেলে সড়ক তৈরি করায় পানিপ্রবাহে বাধার সৃষ্টি হবে কি না, জানতে চাইলে মোদাব্বিরুল বলেন, সে জন্য কয়েকটি পাকা পাইপ (নল) বসিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সাঁকোর জায়গায় নিয়ম না মেনে সড়ক নির্মাণ করাতে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে উল্লেখ করে রাজীবপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল আলী ফকির বলেন, এখানে সেতু নির্মাণের জন্য প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় জোর তদবির করবেন।

নদীর ওপর মাটি ফেলে কোনোভাবেই রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না বলে জানালেন ময়মনসিংহের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখলাক উল জামিল। তিনি বলেন, এতে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়ে বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। কাঁচামাটিয়া ও নরসুন্দা নদী খনন করার জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি বিবেচনাধীন রয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাফিজা জেসমিন বলেন, একজন সার্ভেয়ারকে সাঁকো ঘাট এলাকায় পাঠানো হবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।