সাংসদের শ্যালক ও ভাগনে ভোট ছাড়া চেয়ারম্যান

উমর ফারুক, আবুল কাসেম ও তাবারক মিয়া
ছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) মধ্যে ৩টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে দুটি ইউপিতে জয় পেয়েছেন স্থানীয় সাংসদের আত্মীয়। ওই দুই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যানরা জানান, হামলা ও মামলার ভয়ে এবার তাঁরাসহ অন্য কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে সাহস পাননি।

ইউপি তিনটি হলো উপজেলার হালিমপুর, বলিয়ারদী ও মাইজচর। জয়ী আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা হলেন হালিমপুর ইউপির উমর ফারুক, বলিয়ারদীর আবুল কাসেম ও মাইজচর ইউপির তাবারক মিয়া। তাঁদের মধ্যে উমর ফারুক স্থানীয় সাংসদ (কিশোরগঞ্জ-৫) আফজাল হোসেনের শ্যালক। আর আবুল কাসেম সম্পর্কে সাংসদের ভাগনে এবং তাবারক সাংসদের সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

হালিমপুর ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান কাজল ভূঁইয়া। দলীয় কর্মীরা জানান, হালিম গতবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে জয় পেয়েছিলেন। এবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী উমর ফারুক আগের নির্বাচনেও নৌকা নিয়ে ভোটের মাঠে ছিলেন, তবে জয় পাননি। কাজল ভূঁইয়ার কাছে অল্প ভোটে হেরে যান তিনি।

নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে কাজল জানান, তাঁর বিরুদ্ধে আটটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে একটি খুনের মামলা। অন্য সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেও খুনের মামলা ঝুলে আছে। সুতরাং পরিবেশ আর অনুকূলে নেই। এ কারণে এবার ভোটে যাননি তিনি। এ ইউপিতে অন্যরাও একই কারণে মনোনয়নপত্র কিনতে সাহস দেখাননি। ফলে যা হওয়ার, তা–ই হয়েছে।

তবে উমর ফারুক জানান, তিনি সব সময় এলাকার জনগণের পাশে ছিলেন। ভোটাররা এবার তাঁর বিকল্প ভাবতে চাননি। ফলে এবার আর কেউ নির্বাচনেই দাঁড়াননি। সাংসদের শ্যালক হওয়ার কোনো বাড়তি সুবিধা তিনি পাননি।

বলিয়ারদীর আবুল কাসেমও আগের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়ে হেরে যান। সেবার দলের কাছে নৌকা চেয়ে পাননি ইউনিয়ন কৃষক লীগের মো. শফি উদ্দিন। স্বতন্ত্র হিসেবে বিপুল ভোটে আবুল কাসেমকে পরাজিত করেন তিনি। এবার শফি উদ্দিন ভোটে নেই।

শফি জানান, মামলা-হামলা থেকে বাঁচতে চাইলে নির্বাচন করা যাবে না। তিনিসহ কেউ আর নির্বাচনে দাঁড়াননি। এর মূল কারণ রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ।

মাইজচর ইউপির চেয়ারম্যান তৈয়্যবুর রহমান গত বছরের ১৯ নভেম্বর মারা যান। পরে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয় প্যানেল চেয়ারম্যান তাবারক মিয়াকে। এ বিষয়ে তাবারক ও আবুল কাসেমের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা ফোন ধরেননি। তবে আবুল কাসেম গত মঙ্গলবার জানান, কারও কৃপায় নয়, জনপ্রিয়তার কারণে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তাঁর জয়ের পথ সুগম হয়েছে।

একাধিকবার ফোন করেও সাংসদ আফজাল হোসেনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। তিনিও ফোন ধরেননি।

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল জানান, ধনবাড়ী উপজেলার সাতটি ইউপির মধ্যে তিনটিতেই আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যরা মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ এইচ এম কামরুল হাসান জানান, ধনবাড়ীর মুশুদ্দি ইউপিতে মো. আবুল কায়ছার, বলিভদ্র ইউপিতে মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার ও বীরতারা ইউপিতে আহম্মদ আল ফরিদকে চেয়ারম্যান পদে গতকাল বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। মুশুদ্দি ইউপিতে চারজন, বলিভদ্র ইউপিতে দুজন ও বীরতারা ইউপিতে পাঁচজন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।